মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

খালেদার খনি দুর্নীতি মামলায় অপরাধের উপাদান রয়েছে

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আসামিদের অপরাধের উপাদান রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাই কোর্ট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল হাই কোর্টের প্রকাশিত একটি রায়ে এমন নির্দেশনা এসেছে। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করে। ৬৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, এ মামলায় আসামিদের অপরাধের উপাদান রয়েছে। এখন তা সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।

এ মামলায় ১ নম্বর আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রায় প্রকাশের বিষয়ে দুর্নীতি দমন  কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, একটা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছে, এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামিদের অপরাধের উপাদান পাওয়া গেছে।

জীবদ্দশায় বড়পুকুরিয়া মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছিলেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আমিনুল হক। এরপর তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। ওই রুলের চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে রুলটি খারিজ করে গতকাল পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলো। ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আমিনুল হক মারা যান।

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে শাহবাগ থানায় এ মামলাটি করে দুদক। এর আসামি করা হয় খালেদা জিয়া ও তাঁর সরকারের মন্ত্রীদের। ২০০৮ সালের ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটি এখন ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মৃত), সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী (মৃত), সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মো. মুজাহিদ (মৃত), এম কে আনোয়ার (মৃত), এম শামসুল ইসলাম (মৃত), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক (মৃত), এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন। এদের মধ্যে মৃতদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।

খালেদা জিয়ার হার্ট ও কিডনির জটিলতা সারেনি : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হার্ট ও কিডনির জটিলতা কিছুতেই সারছে না। তবে করোনা পরবর্তী অন্যান্য সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। ফুসফুসে জমে থাকা পানিও প্রায় কমে এসেছে। পুরোপরি সেরে না ওঠায় ফুসফুসে লাগানো পাইপ এখনো রাখা হয়েছে। তবে, তথা শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের মতোই। কোনো পরিবর্তন নেই। এর আগে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার কিডনি ও হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত এবং এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছিলেন।’ দলীয় চেয়ারপারসনের সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন। নাম প্রকাশ না করে একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক। ডায়াবেটিসও প্রায় নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাঁর কিডনি ও হার্টের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকরা এখনো যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।

জানা গেছে, ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য লাগানো দুটি নলের মধ্যে একটি বুধবার খুলে দেওয়া হয়েছে। অপর নলটি এখনো রয়ে গেছে। আর্থ্রাইটিসের কারণে তাঁর হাত-পা ফুলে যাওয়া এবং ব্যথার সমস্যাগুলো এখনো রয়েছে। ফুলা বা ব্যথা কোনোটাই তেমন কমছে না।

গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতাল ও তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার সার্বিক শারীরিক অবস্থার পর্যালোচনা করেছেন। তাদের মতে, গত দুই বছরে তাঁর পুরনো রোগের যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে সেগুলো জটিলাকার ধারণ করেছে। ফলে সেগুলো থেকে আরোগ্য লাভে আরও সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে বেগম খালেদা জিয়ার। ১৫ এপ্রিল সিটিস্ক্যান করান তিনি। পরে অক্সিজেনজনিত সমস্যা দেখা দিলে ২৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ২৮ এপ্রিল ব্যক্তিগত ও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে সেদিন বিকালে একই হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ মে খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে।

সর্বশেষ খবর