বুধবার, ২৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু, দুজনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে মিলেছে উপস্থিতি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

প্রতিবেশী দেশ ভারতের পরে এবার দেশেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত দুজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া তিন দিন আগে হাসপাতালে

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এক রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতি ছিল বলে সন্দেহ করা হয়েছে। দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা। অণুজীববিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলছেন, মিউকোরমাইকোসিস নতুন কোনো ছত্রাক নয়। এই ছত্রাক পরিবেশেই আছে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি বেশি। বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা কোনো কোনো ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।’

মিউকোরমাইকোসিস ছোঁয়াচে নয়। শরীরের যে কোনো স্থানে এর সংক্রমণ হতে পারে। নাকের আশপাশে ও চোখে সংক্রমণ বেশি হয়। চোখে সংক্রমণ হলে তা দ্রুত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত এলাকায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ওই এলাকা কালো হয়ে যায়। তাই একে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বলা হয়। ভারতে মিউকোরমাইকোসিস বা ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জন এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাকে সংক্রমিত প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে। আর যারা বেঁচে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে একটি অংশের চোখ অপসারণ করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, যারা করোনায় সংক্রমিত হন, তাদের সুস্থ করতে স্টেরয়েড চিকিৎসার সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের যোগসূত্র রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে এর সংক্রমণ দেখা দেয়। রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত দুই রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেকজনের শরীরেও ছাত্রাকজনিত রোগটি শনাক্ত হয়। তারা দুজনই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পরে তারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি টিম ওই হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভর্তি থাকা রোগীর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। তাকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।’ অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে বারডেম হাসপাতালের একটি কেবিনে ৫৫ বছর বয়সী এই রোগীর চিকিৎসা চলছে। রোগীর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। প্রায় এক মাস আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি যান। কিন্তু আবার জ্বর দেখা দিলে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বারডেমে নেওয়া হয়। ওই রোগী চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এরপর তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর ও কাশি না কমায় চিকিৎসকরা তাকে যক্ষ্মার ওষুধও দিয়েছেন। তার প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম কে আই কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘এ মাসে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষায় এক রোগীর শরীরে মিউকোরমাইকোসিস ধরা পড়ে। তিনি সাতক্ষীরা থেকে এসেছিলেন। বেশ আগে খুলনায় তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারডেমে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া।’ এ ছাড়া তিন দিন আগে ওই হাসপাতালে একজন রোগীর মৃত্যু হয়। ওই রোগী অন্যান্য রোগের পাশাপাশি মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বারডেম হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক ডা. নাজিমুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই রোগী গত ২২ মে মারা যান। মিউকোরমাইকোসিসের কিছু উপসর্গও তার মধ্যে ছিল, সে কারণে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে ল্যাবে। মৃত্যু পরবর্তী টেস্টগুলো আমাদেরকে সেই দিকে সন্দিহান করছে। তবে এখনো পর্যন্ত আমরা কনফার্ম না যে তিনি মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমাদের আগে থেকে সাবধান হতে হবে। ভয়, আতঙ্কের কিছু নেই।’ গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনের সিনোফার্মের টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘যারা বয়স্ক, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তাদের বেশি করে এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। আমি ইতিমধ্যে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা যেন এই ফাঙ্গাসের জন্য যে ধরনের ওষুধ প্রয়োজন, তা এখন থেকেই তৈরি করে।

সর্বশেষ খবর