শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

জিডিপিতে ভারত পাকিস্তান চীন ছাড়িয়ে বাংলাদেশ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

জিডিপিতে ভারত পাকিস্তান চীন ছাড়িয়ে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি শুধু ভারত বা পাকিস্তানকেই নয়, চীনকেও ছাড়িয়ে। গত মঙ্গলবার (২৫ মে) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে চলমান পঞ্চম এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির সভার দ্বিতীয় দিনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন এবং বহুমাত্রিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো’ শীর্ষক এক থিমেটিক আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল টেলি-কমিউনিকেশন ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল হোলিন ঝাউ-ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেল আলোচনা পর্বে জাতিসংঘ সংস্থা ও সিভিল সোসাইটির সদস্যবৃন্দ এবং শিক্ষাবিদগণ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা পর্বে অংশ নেন সদস্য দেশসমূহের প্রতিনিধিবর্গ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যবৃন্দ। জাতিসংঘ পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির সভা ২৪ মে শুরু হয়েছে যা ২৮ মে শেষ হবে। এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা এবং কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পঞ্চম সম্মেলন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, কভিড-১৯ এর মধ্যেও আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে অতিক্রম করেছি। ২০২০ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সাফল্য তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কভিড-১৯ অতিমারীর লকডাউনকালীন বাংলাদেশ দ্রুতই অনলাইনে সরকার ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও কর্মপরিবেশে নিজেদের পরিবর্তিত করতে পেরেছে। দেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক কভিড শনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং সরাসরি কভিড তথ্য-সহায়তা চালু করার ফলে সবচেয়ে কম সংক্রমণ হারের দেশের তালিকাতে বাংলাদেশ অবস্থান করছে। একযুগ আগের উদাহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, সে সময় বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩ ভাগ। আজ ১২ বছর পর দেশের ১১৬ মিলিয়ন মানুষ সুলভ ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যা দেশের জনসংখ্যার ৭০ ভাগ। এই খাতে সাফল্যের পেছনে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, সরকার তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণে বিগত কয়েক বছরে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল সারা দেশে স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৯০ ভাগ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। আমরা ফাইভ-জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ স্থাপন করেছে। এর ফলে দেশের দুর্গম এলাকাসমূহ ও দীপাঞ্চল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনায় নারীসহ ব্যাপক উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যাপক তথ্য-ব্যাংক সৃষ্টি, মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা পরিশোধ, ই-সরকার, ই-নথি, ই-জুডিশিয়ারি, টেলি ও অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি দফতরসমূহের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা, জাতীয় হটলাইন স্থাপনসহ বাংলাদেশে নাগরিক জীবনধারার প্রতিটি স্তরে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও বিশ্ব সম্প্রদায়কে অত্যন্ত গর্বিত চিত্তে অবহিত করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আইটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব স্কুলেই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সরকার দুই মিলিয়নেরও বেশি নাগরিককে বিভিন্ন ধরনের আইটি প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর এভাবেই তথ্য-প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটালি পশ্চাৎপদ একটি দেশ থেকে বাংলাদেশকে ক্ষমতাসীন সরকার একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে। জয় বলেন, বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব উপায়ে ও স্বল্প খরচে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জ্ঞান ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতি ও সেবা সৃষ্টি করতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে আমরা আমাদের সেবা ও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তাদের সহায়তা করতে সদা প্রস্তুত রয়েছি। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতে ইন্টারনেট সংযোগ, ই-গভর্ননেন্স, ই-বিজনেসের ব্যাপক প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর