বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে মাঠে শফীপন্থিরা

বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ফের রিমান্ডে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণ নিতে মাঠে নেমেছেন প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীরা। আল্লামা শফী হত্যার অভিযুক্ত এবং নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া নেতাদের বাদ দিয়েই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ‘উম্মুল মাদারিস’ খ্যাত দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায়ও ফের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় শফীপন্থিরা। তাদের মধ্য থেকেই কাউকে হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম করার প্রক্রিয়া এগিয়েছে অনেক দূর। আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আল্লামা আহমদ শফী হত্যার অভিযুক্ত এবং বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া আশি শতাংশেরও বেশি শেষ হয়েছে। আশা করছি দ্রুত কমিটি ঘোষণা করতে পারব।’ জানা যায়, গত ২৬ মার্চ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতার ঘটনার দায়ের হওয়া শতাধিক মামলায় গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন কেন্দ্রীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের অনেক। এমন পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফী অনুসারীরা মাঠ গোছাতে নেমেছে। নতুন কমিটির বিষয়ে দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ আলোচনাও হচ্ছে কিছুদিন ধরে। এরই মধ্যে প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। নতুন কমিটি গঠন নিয়ে সবুজ সংকেতও পেয়েছেন। নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া এবং আল্লামা শফী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ সদ্য বিলুপ্ত কমিটির অনেক প্রভাবশালী নেতা বাদ যাচ্ছেন আগামীর কমিটি থেকে। হেফাজতের পাশাপাশি দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার নিয়ন্ত্রণও নিতে মরিয়া শফীপন্থিরা। হাটহাজারী মাদরাসার নতুন মুহতামিম নিয়োগে তারা সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা তৈরি করেছেন। একাধিক কওমি নেতা জানান, আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হাটহাজারী মাদরাসার তিন সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি গঠন করেন শূরা সদস্যরা। ওই তিনজনের যৌথ সিদ্ধান্তে মাদরাসা পরিচালনার কথা থাকলেও মাদরাসা পরিচালনায় নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন হেফাজতে ইসলামের আহ্‌বায়ক কমিটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। শফীপন্থিরা চাইছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কাউকে মুহতামিম নিয়োগ দিয়ে মাদরাসায় নিজেদের কর্তৃত্ব ফের প্রতিষ্ঠা করতে। এরই মধ্যে পাঁচজনের একটি তালিকাও তৈরি করেছেন তারা। এক্ষেত্রে শফীপন্থিরা হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম নিয়োগে বহু পুরনো নিয়ম অনুসরণ করতে চাইছেন। ওই নিয়ম অনুসরণ করলে হাটহাজারী উপজেলার বাইরে কেউ মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে খুব সহজেই আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মুহতামিম হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়বেন। দেশের বৃহৎ এ মাদরাসা নিয়ন্ত্রণে এলে সারা দেশের কওমি মাদরাসাসমূহে কর্তৃত্ব ফের প্রতিষ্ঠা হবে শফীপন্থিদের।

বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ফের রিমান্ডে : হাটহাজারীর নাশকতার ঘটনায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ইনা’আমুল হাসান ফারুকীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল এ আদেশ দেয় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা ইয়াসমিনের আদালত। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, ‘হাটহাজারীর নাশকতার ঘটনায় ইনা’আমুলকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সফর ঘিরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। এ সময় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ইনা’আমুল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী হত্যা মামলারও আসামি।

হেফাজত নেতা কাসেমী ফের রিমান্ডে, আরও নেতার খোঁজে গোয়েন্দারা : ২০১৩ সালে রাজধানীতে হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির বিলুপ্ত অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর আবারও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তার শুনানি শেষে তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

চার দিনের রিমান্ড শেষে এ দিন তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর এ মামলায় তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এদিকে হেফাজতে ইসলামের ঢাকার উত্তরার মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত মুফতি কেফাতুল্লাহ আজহারীসহ আরও দুই ডজন নেতার খোঁজ করছে পুলিশ। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের জামিয়া আল মানহাল কওমি মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল কেফাতুল্লাহ আজহারী আত্মগোপনে থাকলেও সংগঠনের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্নভাবে। হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও এরা বসে নেই। ইমাম মুফতি ফয়জুল্লার নেতৃত্বে তাদের কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে, হেফাজতের পলাতক নেতারা ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেন উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা। পুলিশ জানায়, মুফতি কেফাতুল্লাহ আজহারীসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতার আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। সেদিন রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, আরামবাগসহ আশপাশ এলাকায় যানবাহন ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন তারা। এ ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর