মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
করোনার প্রভাব

বিচার এগোচ্ছে না আলোচিত মামলার

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি : অ্যাটর্নি জেনারেল

আরাফাত মুন্না

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায় হয় গত বছরের ২৪ অক্টোবর। জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদন্ড দেয়। ২৯ অক্টোবর আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের নথি এবং কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিলও হাই কোর্টে পৌঁছায়। সিরাজসহ বেশ কয়েকজন আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল করেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত হলেও করোনার কারণে হাই কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চ বন্ধ থাকায় শুনানি শুরু হয়নি।

শুধু এ মামলাই নয়, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে উচ্চ আদালতের পাশাপাশি সারা দেশের অধস্তন আদালতগুলোতেও বহু আলোচিত মামলার বিচারকাজ থমকে আছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে আপিল বিভাগ চলছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। হাই কোর্টের ভার্চুয়াল কার্যক্রমও চলছে সীমিত পরিসরে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও শারীরিক উপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে তারিখ পরিবর্তন করা হচ্ছে। এসব মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভাইরাসের ওপরে কারোই হাত নেই। তাই বাধ্য হয়েই প্রধান বিচারপতি আদালত সীমিত পরিসরে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আলোচিত মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হবে। এ ছাড়া সব ধরনের মামলার বিচার কার্যক্রমই সচল হবে। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, দুর্ভাগ্যবশত ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে বিচার বিভাগ এখন ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় আছে। মানুষ বিচার পাচ্ছে না। এ জন্যই মামলাজট কমাতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন করা দরকার। উচ্চ আদালতে চাঞ্চল্যকর মামলার মধ্যে রয়েছে- ফেনীর নুসরাত হত্যার ডেথ রেফারেন্স, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ডের রায়ের রিভিউ ও যুদ্ধাপরাধী সৈয়দ মুহাম্মদ কায়সারের চূড়ান্ত রায়, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার ডেথ রেফারেন্স, চট্টগ্রামের লালদীঘিতে ২৪ জন হত্যা মামলার আপিল, হোলি আর্টিজানে হত্যা মামলার আপিল, গাইবান্ধার এমপি হত্যা মামলার আপিল, বাসচাপায় শিক্ষার্থী মীম-রাজিবের মৃত্যুর মামলার আপিলসহ বেশকিছু মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

করোনার কারণে বিচারিক আদালতে আটকে রয়েছে বাড্ডায় গণপিটুনিতে গৃহবধূ রেণু হত্যা মামলা, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা, গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ হত্যার পুনর্বিচার, সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা, যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও আয়কর ফাঁকির মামলা, গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে জাল টাকা ও প্রতারণার মামলার বিচারকাজ। এ ছাড়া জেকেজির ডা. সাবরিনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা, ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে নৌ কর্মকর্তা হত্যাচেষ্টা মামলা, সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা, খালেদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা, ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা, কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হেলিকপ্টার অবতরণের স্থানে বোমা পুঁতে রেখে হত্যাচেষ্টার মামলা, পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ মামলা, ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা, ব্লগার নিলয় হত্যা মামলা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাড়িচালক মালেকের বিরুদ্ধে মামলাসহ অসংখ্য মামলা বিচারাধীন। এদিকে রানা প্লাজা হত্যা মামলা, অভিজিৎ হত্যা, নায়ক সালমান শাহ হত্যাসহ চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন হত্যা মামলার বিচারও স্থবির হয়ে আছে। নাইকো, গ্যাটকো, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিসহ একাধিক দুর্নীতির মামলা চার্জ গঠনের পর্যায়ে থাকলেও করোনার কারণে আটকে আছে কার্যক্রম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর