মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভার বৈঠক

সাত জেলায় লকডাউন চান স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত সীমান্তবর্তী সাত জেলায় লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে দেরি হলে সংকট বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এটা পর্যালাচনা করছে। আম চাষিদের অবস্থা বিবেচনা করে হয়তো দেরি করছে। আমরা চাই দ্রুত লকডাউন দেওয়া হোক প্রস্তাবিত জেলাগুলোয়। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা (লকডাউনের সিদ্ধান্ত) কেবিনেট (ডিভিশন) করে। আমরা আলাপ করব যে উনারা কবে থেকে লকডাউন দেবেন। কিন্তু আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, যেসব জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, বেশি বেড়ে যাচ্ছে, সেখানে লকডাউন দিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে ‘লকডাউন’ দিতে দেরি করলে ঝুঁকি থেকেই যাবে। তবে এখন যেহেতু রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আম ও লিচুর মৌসুম চলছে। সেখানে ৩/৪ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। কঠোর লকডাউন দিলে চাষিরা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। এ দিকটাও তারা (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) মাথায় নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু আমাদের পরামর্শ হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লকডাউন দিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ এটা যেন সারা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে।

টিকা বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, সিনোফার্মার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কেনার জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া শেষের পথে। সেটা হলে জুন থেকেই ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা পাওয়া যাবে। এভাবে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসবে। টিকা এলে সরকার প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে, যাতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা চাই টিকা নিয়ে তারা লেখাপড়া শুরু করুক। ফাইজারের টিকার ক্ষেত্রেও আমরা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেব।

এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সাত জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি যে চিঠি দিয়েছে, তা তারা এখনও ‘হাতে পাননি; তবে স্থানীয় পর্যায়ে আগেই নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা না হয়। অলরেডি ডেপুটি কমিশনার (ডিসি), সিভিল সার্জন, চেয়ারম্যান বা মেয়র সাহেব; উনাদের বলেই দেওয়া আছে, যদি আপনারা মনে করেন যে কোনো জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ, সেক্ষেত্রে আপনাদের কমফোর্ট অনুযায়ী এটা করে দিতে পারবেন। ইচ্ছা করলে স্থানীয় জেলা প্রশাসন লকডাউন ঘোষণা করতে পারবেন, উনাদের আগেই বলে দেওয়া হয়েছে। যেমন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, এটা কিন্তু ওখান থেকেই সাজেশন এসেছে। পুরো জেলা অবরুদ্ধ না করে বেশি সংক্রমণের এলাকাগুলোতে বিধিনিষেধ জারির কথাও ভাবা হচ্ছে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা ডিস্ট্রিক্টগুলোতে বলে দিয়েছি, যদি মনে করে পুরো ডিস্ট্রিক্ট না করে ওই বর্ডার এলাকা লকডাউন করতে হবে, সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে উনারা সাজেশন দেবেন। পাশাপাশি এতদিন ধরে লকডাউন, নর্থ বেঙ্গল এখন আমের একটা মৌসুম। এই সময়ে যদি পুরোপুরি লকডাউন হয়, তখন কী হবে এগুলো বিবেচনায় আছে। তবে যদি হার্মফুল মনে করি, তাহলে সেটা অবশ্যই।

এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, কেবিনেট ওই কথাই বলেছে। একটা লকডাউন চলছে। আর যদি কোনো লোকাল জায়গায় কোনো রকম মনে হয়, যেমন-গতবছরও আমরা কোনো কোনো জায়গায় করেছি। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কভিড রোগীর চাপ বাড়তে থাকলেও হাসপাতাল ও চিকিৎসা অবকাঠামোর ঘাটতির বিষয়গুলো আসছে সংবাদমাধ্যমের খবরে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইতিমধ্যে ডিজি হেলথকে বলা হয়েছে, যে সব জেলার খারাপ অবস্থা, সেখানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেন। আইসিইউর ব্যবস্থা এবং মেডিকেল কলেজগুলোর সিরিয়াস রোগীদের আগেই শিফট করার উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, যাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাদের আলাদা করে রাখার জন্য বলা হয়েছে। আর যারা সে দেশ থেকে আসছেন তাদের মাস্ট ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করতে হচ্ছে। ক্রিকেটার সাকিব ও মোস্তাফিজকেও কোয়ারেন্টাইন করতে হয়েছে। তারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। কারও ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর