বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
নারী চিকিৎসক হত্যা

মামলায় রাজি নন স্বজনরা

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর কলাবাগানের ভাড়া বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, ডা. সাবিরা রহমানের স্বামী, সন্তান বা স্বজনদের কেউই মামলার বাদী হতে চাচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত যদি কেউ বাদী না হন, নির্দিষ্ট সময় পর পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করবে। খুনের রহস্য উন্মোচনে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।

ডা. সাবিরার ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা তরুণী কানিজ সুবর্ণা, তার ছেলে বন্ধু মাহতির মোহাম্মদ স্পন্দন এবং বাড়ির দারোয়ান রমজানসহ তিনজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।  গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ডা. সাবিরার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। প্রায় ঘণ্টা খানেক ময়নাতদন্ত শেষে মর্গ থেকে বেরিয়ে আসেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ। কিন্তু তিনি ময়নাতদন্তের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।

তবে মর্গ সূত্র জানিয়েছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই চিকিৎসকের শ্বাসনালি কাটা হয়েছে। এতেই তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া তার শরীরে অস্ত্রের একাধিক আঘাত পাওয়া গেছে। তার মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় রবিবার রাতে। আর পরদিন সোমবার তার লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট ও কেমিকেল অ্যানালাইসিসের জন্য লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর নিহত চিকিৎসক ডা. সাবিরার মামাতো ভাই রেজাউল ইসলাম পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ বুঝে নেন। রেজাউল ইসলাম গতকাল বাদ আসর গ্রিনরোডে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে সাবিরার লাশ দাফনের কথা জানান। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ওই চিকিৎসক খুনের ঘটনায় এখনো কেউ মামলা করেনি। তবে আমরা তার সাবলেট ভাড়াটিয়া তরুণীকে সন্দেহের মধ্যে রেখেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সে এখনো কিছু বলেনি। সে ছাড়াও বাড়ির দারোয়ান, সাবিরার স্বামী সামসুদ্দীন আজাদসহ কেউই আমাদের সন্দেহের বাইরে নেই।  সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট সূত্র জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিলড) করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মাহবুব আলম জানান, তারা ঘটনাটির তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন। তবে তারা এখনো কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি। হত্যাকান্ডটিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে। সূত্র জানায়, সাবিরা খুনের ঘটনায় তার এক মামাকে বাদী হতে বলা হলেও ঢাকার বাইরে বসবাস এবং সেখানে ব্যবসা থাকার কারণ দেখিয়ে তিনি মামলার বাদী হতে রাজি হননি। সাবিরার একমাত্র ছেলে তাজোয়ার এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তাকেও মামলার বাদী হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সাবিরার মা এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, ছেলেটি কিছুদিনের মধ্যেই পড়াশোনার জন্য কানাডায় চলে যাবে। তাই তাকেও বাদী করা যাবে না। জানা গেছে, কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ নম্বর বাড়িতে তিন রুমের ভাড়া বাসায় একটিতে সাবিরা একাই থাকতেন। অন্য দুটি রুম সাবলেট দিয়েছিলেন। সাবিরার মায়ের বাসা পাশেই। সেখানেই তার এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকত। ছেলের বয়স ২১ বছর, পড়াশোনা করছে কানাডায়। সম্প্রতি ছুটিতে দেশে এসেছে। আর ১১ বছর বয়সী মেয়েটি কলাবাগানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। সাবিরার স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ ন্যাশনাল ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি শান্তিনগরে থাকেন। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে তালাক না হলেও কয়েক বছর ধরে তারা আলাদা বসবাস করছেন। সাবিরার বাসায় কানিজ সুবর্ণাসহ আরেকটি মেয়ে ওই বাসায় সাবলেট ভাড়া থাকতেন। অপরজন রোজার ঈদে বাড়ি গিয়ে এ পর্যন্ত ফেরেননি। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ¯œাতক সম্পন্ন করেছেন কানিজ সুবর্ণা। তার বক্তব্য কিছুটা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তাকে ও তার ছেলেবন্ধুকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর