বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
একনেকে ৯ প্রকল্প অনুমোদন

পরিবেশের ছাড় না পেলে ধরে নিতে হবে ইতিবাচক : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবেশের ছাড় না পেলে ধরে নিতে হবে ইতিবাচক : প্রধানমন্ত্রী

প্রকল্প বাস্তবায়নকালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র না এলে সেটাকে অনাপত্তি ধরে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা যদি চুপচাপ বসে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, তাদের কিছু বলার নেই। বিষয়টি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলেন তিনি। গতকাল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন বলে বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।

প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দিতে দেরি হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের কাছে যেতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেরি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। যার কারণে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে ছাড়পত্র চাওয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে যদি তারা ছাড়পত্র না দেয়, বা কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে এ বিষয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এ ক্ষেত্রে ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আমরা এই বিষয়টিকে আইনি পর্যায়ে নিয়ে আসব।’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনো ক্যাটাগরির দিকে যাওয়া হয়নি। জেনারেলি একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে খুবই জরুরি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বা যে কোনো কারণে ছাড়পত্র পেতে দেরি হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেরি কেন হবে। একটি রিজনেবল টাইম ধরে আপনারা এটি চাইবেন। এ সময়ের মধ্যে তারা ছাড়পত্র দিতে পারে। আপত্তি জানাতে পারে কিংবা রিভাইস করার পরামর্শ দিতে পারে। তারা চুপচাপ বসে থাকবে জবাব দেবে না, এটা হবে না। যদি তারা চুপচাপ বসে থাকে, তাহলে ধরে নেব তাদের কিছু বলার নেই। এর মানে মৌনভাব সম্মতির লক্ষণ। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে যদি কোনো আপত্তি আসে, সে ক্ষেত্রে কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ সরকারের অংশ, যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে তারাও সরকারের অংশ। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নকালে যদি এমন কোনো সমস্যা দেখা যায়, সত্যিই সেটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর থেকে তখনো যদি কোনো আপত্তি আসে, তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। নিশ্চয়ই আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এমন কোনো কিছু করব না, যা পরিবেশের ক্ষতি হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গাছ কাটলে গাছ লাগাতে হবে। এটা তিনি আগেও বলেছেন আজও বলেছেন। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো যেন বন্ধ না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেগুলোর দিকে নজর দিতে বলেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, বড় নদীতে পানি প্রবেশ ও বের হওয়ার যে খালগুলো রয়েছে, এগুলো যেন বন্ধ না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। নদী এলাকায় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, অনেক জায়গায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খালগুলো বন্ধ করা হয়। স্লুইস গেটের নামে পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো হয়। পরে দেখা যায়, স্লুইসগেটগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। অযথা অনেকগুলো টাকা ব্যয় করা হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এ বিষয়গুলো দেখতে বলেছেন।

খিচুড়ি রান্নার প্রকল্প বাতিল : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিড ডে-মিল হিসেবে খিচুড়ি রান্নার প্রকল্প আপাতত বাতিল করেছে একনেক। গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘প্রাইমারি স্কুল প্রকল্প’ উপস্থাপন করা হলে তা বাতিল করা হয়। প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে অন্য কী করা যায় সেটি ভাবতে হবে। কেননা রান্নাবান্না অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও প্রকল্পে সরকারি অর্থের পাশাপাশি স্থানীয় বিত্তবানদের কীভাবে অংশগ্রহণ করানো যায় সেটি তিনি ভাবতে বলেছেন। জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের জন্য শুরুতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশনের প্রশিক্ষণ নিতে এক হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিদেশ সফরের একটি প্রস্তাব ছিল, যা নিয়ে গত বছর ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে প্রস্তাব থেকে ব্যয়ের পরিমাণ ১ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা কমিয়ে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা করা হয়।

নয় প্রকল্প অনুমোদন : একনেক প্রায় ৫ হাজার ২৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ের নয়টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫ হাজার ৪ কোটি ৩৯ লাখ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ২৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, ৬৪৩ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ (আর-৭৪৫) আঞ্চলিক মহাসড়কটির কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প; ২৩৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর নবসৃজিত নারায়ণগঞ্জ (৬২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অবকাঠামোগত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ’ প্রকল্প; ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র’ প্রকল্প; ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প; ৮৮ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প; ৩৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায় (ইরেসপো-দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প; ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদের পন্ডিতের হাট এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প; ২৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্প (পিজিসিবি) অংশ; মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং ৩০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর