বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

জিডিপির টার্গেট ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

উৎপাদন বাড়াতে হবে ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

 জিডিপির টার্গেট ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

নতুন অর্থবছরে টাকার অঙ্কে জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ পরিমাণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ১ জুলাই শুরু হওয়া অর্থবছরে কৃষি, শিল্প, সেবা খাত মিলিয়ে মোট দেশজ উৎপাদন চলতি অর্থবছরের চেয়ে টাকার অঙ্কে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বাড়াতে হবে।

একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছরে চূড়ান্তভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারে সামষ্টিক মূল্যই হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি বা গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট)। আগের বছরের তুলনায় পরের বছরে এ উৎপাদন যে হারে বাড়ে সেটি হচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের করোনা মহামারীর রেশ এখনো রয়ে গেছে। উপরন্তু কভিড-১৯-এর সেকেন্ড ওয়েভের কারণে জারি করা লকডাউন কার্যক্রম এখনো চলছে। সীমান্ত এলাকাগুলোয় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ওইসব এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন অর্থবছরে উৎপাদনের মাত্রা কীভাবে বাড়বে তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও সরকার আশা করছে নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে অর্থনীতি গতি ফিরে পাবে।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মহামারী থাকলেও কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। রেমিট্যান্স আয়ও বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এটি দেশে ভোগ্য ব্যয় বাড়াবে। রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। এ অবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, জুন-জুলাই থেকে চীনের টিকা দেওয়া কার্যক্রম শুরু করতে পারলে মানুষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। লকডাউন উঠে গেলে অর্থনীতি পুরো গতিতে চলতে শুরু করবে। বিশেষ করে এসএমই খাতে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। ফলে চলতি অর্থবছরের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি যে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হচ্ছে তা অর্জন সম্ভব হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয় ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এটি ছিল আগের অর্থবছরের সংশোধিত জিডিপির তুলনায় ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে দুই দফায় এটি সংশোধন করে কমিয়ে ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। মহামারীর কারণে ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থবছরের শুরুটাই হয় লকডাউনের মধ্য দিয়ে। করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের মার্চ থেকে লকডাউন কার্যকর করায় অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসে। বন্ধ থাকে শিল্পকারখানা, যানবাহন, হোটেল-মোটেল, পর্যটন সেবা। এতে দেশে একটি বছরে সামগ্রিকভাবে যে পরিমাণ উৎপাদন আশা করা হয়েছিল বাস্তব ক্ষেত্রে তার চেয়ে অনেক কমে যায়। সীমিত পরিসরে নিত্যপণ্যের দোকানপাট চালু থাকলেও মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় কমে যাওয়ায় ভোগব্যয় হ্রাস পায়। এ অবস্থায় সরকার একাধিকবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি সংশোধন করতে বাধ্য হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৩১ ডিসেম্বর সামষ্টিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছিল। এ অবস্থায় গত মার্চ থেকে দ্বিতীয় দফায় কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৪ এপ্রিল অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, পরিসংখ্যান ব্যুরো, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো দেশের কৃষি উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, সেবা খাতের সূচকসহ সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর পর্যালোচনা করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রাক্কলন করে।

সর্বশেষ খবর