শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বেঙ্গালুরুর বন্দীদশা থেকে পালিয়ে ঢাকায় এসে কিশোরীর মামলা

পালাতে সাহায্য করায় ভারতে সেই তরুণীকে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উঠতি বয়সী তরুণী সোনিয়া (ছদ্মনাম)। রাজধানীর মগবাজার এলাকায় তার বাসা। ২০১৯ সালে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। কখনো টিকটক স্টার বানানোর কথা বলে, কখনো ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে তাকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে হৃদয়। একপর্যায়ে তাকে ভারতে পাচার করে দেয় হৃদয়ের চক্রটি। ভারতের বেঙ্গালুরুতে রেখে ধারাবাহিক শারীরিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী ৭৭ দিন পর কৌশলে দেশে পালিয়ে আসেন। আর তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে বেঙ্গালুরুতে ভিডিও ভাইরাল হওয়া নির্যাতিত সেই তরুণীটি। পালিয়ে যেতে সাহায্য করার শাস্তি হিসাবে তাকে শারীরিক নির্যাতন ও দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।

ভারতফেরত ওই তরুণী জানান, সেখানে অবস্থান করার সময় বাংলাদেশি আরও অনেক তরুণীকে তিনি দেখেছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে এই চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়েছেন। তাদেরও রয়েছে বীভৎস নির্যাতনের রোমহর্ষক কাহিনি।

পুলিশ জানায়, ভারতফেরত তরুণী গত মঙ্গলবার রাতে ১২ জনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ১২ জন আসামির মধ্যে পাঁচজন বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন। মামলা দায়েরের পরপরই মঙ্গলবার দিবাগত

রাতে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন-  মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদের। যারা ভারতে প্রায় ১ হাজার নারীকে পাচারে সীমান্ত পার হতে সরাসরি সহায়তা করেছিলেন। পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে সেখান থেকে কৌশলে দেশে ফেরা ওই কিশোরীর করা মামলার এজাহারেও তদন্তে উঠে আসে রোমহর্ষক বর্ণনা, যা করুণ কাহিনি কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। জানা যায়, টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে টিকটক হ্যাংআউট করে হৃদয়। পরে একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০-৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করা হয়। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এই তরুণীকে চক্রের অন্যদের সহায়তায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেয় হৃদয়। ওই তরুণী পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ভারতে পাচারের পর তাকে বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকার কয়েকটি বাসায় পর্যায়ক্রমে রাখা হয়। এ সময় ভারতে এ চক্রের দ্বারা পাচারকৃত আরও কয়েকজন বাংলাদেশি কিশোরীকে সেখানে দেখতে পান। যাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পারলারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর কয়েকদিন পরই ওই ভুক্তভোগী তরুণীকে চেন্নাইয়ের অয়ো হোটেলে ১০ দিনের জন্য পাঠানো হয়। সেখানেই জোর করে তাদের যৌন ব্যবসায় নামাতে বাধ্য করে। কৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিংবা জোরপূর্বক বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্য বা পরিচিতদের পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল তাকে। অমানবিক শারীরিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতন করতে সামান্যতম দয়া কিংবা করুণা দেখায়নি চক্রের সদস্যরা। পুলিশ জানায়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নির্যাতিত ওই তরুণীর সহায়তায় ভারতে পাচার হওয়া তিনজন দেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। যাদের একজন সাদিয়া ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর দেশে ফিরেছেন। বাকি দুজন ভারতফেরত ভুক্তভোগীর নাম-ঠিকানা জেনে যোগাযোগের চেষ্টা করছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাচারের শিকার ও পাচারকারীরা অবৈধভাবে ভারতে যায়। তাদের কাছে ভিসা-পাসপোর্ট বা কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র থাকে না। এরপর চক্রের ভারতীয়দের সহায়তায় সে দেশের আধার কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর