বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর পলাতক চার খুনির মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধুর পলাতক চার খুনি শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এ বি এম এইচ নূর চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ওই সিদ্ধান্তের গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) এক সভায় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, খেতাব বাতিল হলে তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য আর কোনো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দন্ডিত চার পলাতক খুনির খেতাব স্থগিতের জন্য হাই কোর্ট একটি আদেশ দিয়েছিল গত বছরের শেষ দিকে। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে জামুকার বৈঠকে চারজনের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কারণে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের বীরউত্তম খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জামুকার ওই সভায়। তবে জিয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা, যদিও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া জিয়াও ওই হত্যাকান্ডে পুরোপুরি জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার খুনিদের রক্ষায় সে সময় একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন তখনকার স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ। পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিয়ে সংবিধান সংশোধন করে খুনিদের রক্ষার পথটি স্থায়ী করার প্রয়াস চালান। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে। এরপর বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালতের চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী ছয় খুনির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়। তবে মৃত্যুদন্ড মাথায় নিয়ে পাঁচজন এখনো রয়েছেন পলাতক। তার মধ্যে নূর চৌধুরী বীরবিক্রম, শরীফুল হক ডালিম বীরউত্তম, রাশেদ চৌধুরী এবং মোসলেহ উদ্দিন খান বীরপ্রতীক খেতাবধারী। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ওই চারজনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব স্থগিতের নির্দেশ দেয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি রুল জারি করে হাই কোর্ট। সেই প্রেক্ষাপটে জামুকার বৈঠকে খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয় বলে কর্মকর্তারা জানান।

ভাসানচরে অনুমতি ছাড়া কেউ যেতে পারবে না : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এখন থেকে ভাসানচরে কাউকে যেতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সাংবাদিকদেরও অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। গতকাল আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু দুই দিন যাবৎ সেখানে তারা (রোহিঙ্গা) একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তারা দাবি করছে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা দেওয়ার। কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীর নাগরিক সুবিধা দেওয়া হয় না। শরণার্থীদের শুধু আশ্রয় দেওয়া হয়। তাদের দাবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মন্ত্রী আরও বলেন, কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গার অনেকেই মাদক ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কাজে জড়িত। এসব বিষয়ে কঠোর নজরদারির জন্য ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়ার কাজ চলছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে আশা করি এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

অভিযোগ ছাড়া ভবিষ্যতে হেফাজতের কাউকে গ্রেফতার করা হবে না : সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতা-কর্মীকে ভবিষ্যতে গ্রেফতার করা হবে না বলেও জানিয়েছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। হেফাজতে ইসলাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খুবই নগণ্যসংখ্যক, হাতে গোনা কয়েকজনকে গোয়েন্দা সংস্থা চিহ্নিত করেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, ভবিষ্যতেও কাউকে গ্রেফতার করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, কোনো ভুল মেসেজ যদি জাতির সামনে গিয়ে থাকে, বোধহয় আলেমওলামাদের গ্রেফতার-হয়রানি করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কোনো অবস্থায়ই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া গ্রেফতার করা হবে না, সে রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপরাধের বিচার হবে অপরাধী হিসেবে। কোনো দলীয় বা সম্প্রদায়ের পরিচয়ে আইনের অপব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।

অপরাধে জড়াচ্ছেন ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া বিদেশিরা : মোজাম্মেল হক বলেন, কিছু বিদেশি নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা দেশে যেতে পারছেন না। নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। বিমান বন্ধ, কেউ বলছেন টাকা নেই। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের অধিকাংশই ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত। তাদের আইনের আওতায় এনে সেফ জোনে রাখা বা যদি টাকা না থাকে সরকারিভাবে টিকিট সংগ্রহ করে তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর