বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

এনআইডি স্থানান্তর ইসির কফিনে শেষ পেরেক

নিজস্ব প্রতিবেদক

এনআইডি স্থানান্তর ইসির কফিনে শেষ পেরেক

জনবলসহ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাকে নির্বাচনের কফিনে সর্বশেষ পেরেক বলে অভিহিত  করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত, তা বোধগম্য নয়। গতকাল নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ অন্যত্র স্থানান্তর সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার অন্তিমযাত্রার আয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মাহবুব তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্বেগের সঙ্গে তিনি একাত্মতা ঘোষণা করছেন।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, মন্ত্রিপরিষদের যুগ্ম সচিবের সই করা পত্রে এনআইডি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ?‘নির্বাচন কমিশন’ এর বদলে ‘সরকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এনআইডির বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচ্য। মাহবুব তালুকদার বলেন, ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এর ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেস নির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে জটিলতার সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া এতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হবে। এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন। মাহবুব তালুকদার বলেন, স্থানান্তরের বিষয়টি আগে কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের শামিল। নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এ যাবৎকালে এমন ঘোরতর দুর্দিন আর আসেনি। তিনি বলেন, ?সংবিধানের ১০৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে, “নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।”

এটি কমিশনের জন্য রক্ষাকবচ হলেও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এখন কোথায়? আমি আশঙ্কা করি, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ অন্যত্র স্থানান্তর সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার অন্তিমযাত্রার আয়োজন।’ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি দুটি জরিপ দেখেছি। এর মধ্যে একটিতে ৯২ শতাংশ এবং আরেকটি জরিপে ৯১ শতাংশ মানুষ ইসির কাছে এনআইডি রাখার মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের যদি প্রয়োজন হয় এমন একটি আইডি কার্ডের, তবে তা আলাদা উদ্যোগে অবকাঠমো করে নিতে পারেন। আমাদের এখানে হাত দেওয়ার তো কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এনআইডির কাজে আমি গর্ববোধ করি। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে কমিশন সেই স্বাধীনতা রক্ষা করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর