শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি

বাজেট ঘাটতির অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটাই বড় প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘প্রস্তাবিত বাজেটে ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটাই বড় প্রশ্ন। দুর্বল অনুমিতির ওপর ভিত্তি করে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি কাঠামোর বাস্তবতার সঙ্গে বাজেটের কোনো মিল নেই। করব্যবস্থার আমূল সংস্কার নিয়ে নানা কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রচলিত করব্যবস্থার মধ্যে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’ গতকাল রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম। সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনা মহামারীর কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও শিক্ষা; যা আগামী অর্থবছরের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে। ৬ লাখ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট সংকটের মধ্যে ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। যেখানে চলতি অর্থবছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। নতুন করে এত বড় ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে তা এক বড় প্রশ্ন। সরকার যদি কর আদায় করতেও পারে তাতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপও বাড়বে।

সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, দেশে আগের নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে নতুন করে বিপুল মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে দরিদ্র হয়েছে। এসব প্রান্তিক দরিদ্র ও নতুন যুক্ত দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি জরুরি। করোনা মহামারীর কারণে স্বাস্থ্য খাতে যে পরিমাণ দুর্বলতা আমরা দেখেছি তা থেকে উত্তরণ এখন হচ্ছে না। বন্ধ হয়ে থাকা শিক্ষাব্যবস্থা এখন চালু করা যেমন জরুরি, তেমনি প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কোনো সুখবর দেখা যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি শিল্প ও গতানুগতিক অর্থনীতির জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকলেও মূল প্রতিপাদ্য ‘জীবন-জীবিকা’ রক্ষার স্পষ্ট কোনো রূপরেখা নেই।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটা কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বাজেট পেশ করা হয়েছে। পরে দেখা যাবে যে অনুমিতিগুলো করা হয়েছে সেগুলো ঠিক ছিল না। দুর্বল অনুমিতির ওপর প্রাক্কলন বাজেটকে কাঠামোগত দুর্বল করে দিয়েছে। একে কভিডকালীন বাজেট বলা হলেও স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে তার প্রতিফলন নেই। কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা মহামারীতে যারা নতুন করে দারিদ্র্যে পড়েছেন তাদের বিষয়েও বাজেটে তেমন কিছু নেই। বাজেটে ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা আছে, তাতে কর্মসংস্থান তৈরির পরোক্ষ একটি চেষ্টা হয়তো আছে, কিন্তু পরোক্ষ চেষ্টায় অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা যায় না। বাজেটে প্রয়োজনীয় কিছু উদ্যোগ থাকলেও তা যথেষ্ট নয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে স্থানীয় শিল্পের বিকাশে কিছু কর ও শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুধু কর কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না। বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অন্য বিষয়গুলোও সহজ করতে হবে। যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা-ও সক্ষমতার অভাবে ব্যয় করা যাচ্ছে না। অথচ সারা দেশের ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামো দিয়েও আমরা অর্থ ব্যয় করতে পারি। সরকার তা-ও করছে না। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন যুক্ত করে বড় দেখানো হচ্ছে। পেনশন বাদ দিলে এ খাতে থাকে মাত্র বাজেটের ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এ বরাদ্দ কভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সমাধান করতে পারবে না। তিনি বলেন, আয়বৈষম্য, ভোগবৈষম্য এবং সম্পদবৈষম্য দূর করাই বাজেটের দর্শন। সেটাই প্রস্তাবিত বাজেটে অনুপস্থিত।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যাদের জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন তাদের দেওয়া হয়নি। আবার যার দরকার নেই, তাকেও দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রার হাজার হাজার মানুষ বাঁধের জন্য আন্দোলন করলেও তাদের বাঁধের জন্য বরাদ্দ নেই। কিন্তু কিছু বৃহৎ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে খরচ করার সক্ষমতা নেই।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জীবন ও জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে শিরোনামে যে বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে তাতে শিল্প ও বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়ে কর আদায় ও রাজস্ব খাতে বেশ কিছু সংস্কারের কথা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি করব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন কিংবা সেই সংস্কার অনুমতি পায় না শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে। করবৈষম্য, করব্যবস্থার দুর্নীতি দূরীকরণের কথা বারবার বলা হয়। তবে এর কোনোটাই বাস্তবায়ন হয় না। কারা বাধা দেয় এ সংস্কারের তাদের খুঁজে বের করা উচিত। কভিডে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা ?পুষিয়ে আনার জন্য কী কাজ করব আগামী তিন-চার বছরে তার কোনো নির্দেশনা নেই। এখানে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার ছিল। বাস্তবায়নের সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা দেখতে পাচ্ছি না।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, মহামারীর ক্ষতি পোষাতে সরকার যে ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে তার ৮০ শতাংশ ঋণনির্ভর, বাকিটা রাজস্ব সহায়তা। এখন মানুষের আয় নেই। তাই রাজস্ব থেকে বেশি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম আমরা। সেটা একই রাখা হয়েছে। এটা বাড়ালে ভালো হতো। ব্যক্তির খরচ না বাড়ালে অর্থনীতির গতি বাড়বে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর