শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকটকারদের টার্গেটে শোরুমের নারী বিক্রয়কর্মী

মাহবুব মমতাজী

ভারতে নারী পাচারকারীদের টার্গেটে ছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন সুপার শপ ও শোরুমে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করা তরুণীরা। তাদের বিভিন্ন বড় সুপার শপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায় তারা। অনেকেই এতে রাজি হয়। কিন্তু চাকরি না দিয়ে তাদের টিকটক তারকা বানানোর প্রলোভন দেখায়। চক্রের সদস্যরা তাদের বোঝাতে থাকে, টিকটকে প্রচুর আয়-রোজগার হয়। এতে করে দেশের বাইরে যাওয়ারও সুযোগ থাকে। তাদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে টিকটক তারকাদের সঙ্গে সময় দিতে শুরু করেন। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে হৃদয় বাবু নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ডপার্কে ‘টিকটক হ্যাংআউট’ পার্টির আয়োজন করে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে টিকটক তারকারা সেখানে আসে। রিজার্ভ বাসে করে পার্টিতে প্রায় ৭০-৮০ জনের মতো উপস্থিত হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পার্টি চলে। সবাই অনেক ছবি তোলে। হৃদয় সেখানে তরুণীদের জানায়, টিকটকে ভিডিও বানিয়ে অনেক টাকা আয় করার সুযোগ আছে। এভাবে নিজের দিকে তরুণীদের কাছে টানত হৃদয় বাবু। আর তার এই আশ্বাসে বেশি আকৃষ্ট হতেন বিভিন্ন সুপার শপ ও শোরুমে কাজ করা তরুণীরা। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারানোরাও ছিলেন। টিকটক হৃদয়ের ফাঁদে পড়ে ভারতে পাচার হওয়ার পর ৭৭ দিনের এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নময় সময় পার করে মে মাসে কৌশলে পালিয়ে দেশে ফেরেন এক তরুণী। ১ জুন রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার আইনে হৃদয়সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

কীভাবে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয়, কোন কৌশলে তাকে ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয় এবং কারা তার পাচারের টার্গেট ছিল- এর বর্ণনা মামলার এজাহারে জানিয়েছেন ওই তরুণী।

তরুণী জানান, এক বান্ধবীর সঙ্গে হাতিরঝিলে ঘুরতে গেলে হৃদয় যেচে এসে পরিচিত হয় তার সঙ্গে। ২০১৯ সালে মার্চে কোনো এক সময়ে বান্ধবীর সঙ্গে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজে ঘুরতে যান তিনি। এ সময় ২০-২৫ বছর বয়সী পাঁচ-ছয়জন ছেলে তাদের সামনে আসে। তাদের মধ্যে একজন তার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলে। তার নাম রিফাদুল ইসলাম হৃদয়। এরপর হৃদয় তার সঙ্গে পরিচিত হয়। মাসখানেক পর একটি শপিং মলে শোরুমে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে গেলে সেখানেও হৃদয় বাবুর সঙ্গে তার দেখা হয়। সে সময় হৃদয় বাবুকে তিনি তার মোবাইল নম্বর দেন। হৃদয় পরিচিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময় তাকে কল করতেন, মেসেজ দিতেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ডাকতেন। কিন্তু তিনি যাননি। ২০১৯ সালে প্রথম হাতিরঝিলে ও দ্বিতীয়বার একটা শপিং মলে তাদের দেখা হয়। ২০২০ সালের প্রথম দিকে মৌচাকের সেন্টার পয়েন্ট মার্কেটের তৃতীয় তলার একটি বুটিক শপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন ওই তরুণী। হৃদয় সেই খবর পেয়ে সেখানেও কয়েক দিন যায়। বিক্রয়কর্মী নয়, ভালো বেতনে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয় হৃদয়। এরই মধ্যে ওই তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় সে। তা প্রত্যাখ্যান করেন ওই তরুণী। হৃদয় শিগগিরই পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে বলে জানায়। এরপর হৃদয় ওই তরুণীকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে তাকে অ্যাড করার জন্য ফোনে অনুরোধ করে। ওই তরুণী তাকে ফ্রেন্ড লিস্টে অ্যাড করেন। মোবাইল ফোনে ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে হৃদয়ের সঙ্গে ওই তরুণীর কথা হতো। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের ‘আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে’ হৃদয় একটি পুল পার্টির আয়োজন করে। এতে ৭০০ থেকে ৮০০ তরুণ-তরুণী অংশ নেয়। সবাই টিকটক করে এবং হৃদয়ের পরিচিত। হৃদয় ও তার কয়েকজন বন্ধু ফেসবুকে টিকটক গ্রুপ খুলে এই পার্টিতে অংশ নিতে গ্রুপের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। পার্টিতে অংশ নেন ওই তরুণীও। ওই তরুণীর মতো সেখানে ছিল আরও অন্তত ২০০ কিশোরী-তরুণী। এর পরই তাদের পাচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর