সোমবার, ৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সিনোভ্যাকের টিকা অনুমোদন, চূড়ান্ত পর্যায়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি

চীনের টিকার দাম বলার পর অতিরিক্ত সচিব ওএসডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনের দ্বিতীয় টিকা হিসেবে বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে সিনোভ্যাক লাইফ সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা। সিনোভ্যাকের দেশীয় এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড ‘করোনা ভ্যাক’ নামের এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়েছিল। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুমোদনের বিষয় জানিয়েছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মোট পাঁচটি টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ। এর আগে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি, চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার বিবিআইবিপি-সিওরভি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সবুজ সংকেত পায়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া যাবে। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশে অনুমোদন পাওয়া আগের টিকাগুলোর মতোই ‘করোনা ভ্যাক’ নিতে হবে দুই ডোজ করে। প্রথম ডোজ নেওয়ার দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।

চীনের ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এনএমপিএ গত ৯ ফেব্রুয়ারি সে দেশে করোনা ভ্যাক ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। গত ১ জুন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি ব্যবহার্য টিকার তালিকায় যুক্ত হয় সিনোভ্যাকের এ টিকা। বর্তমানে বিশ্বের ২২টি দেশ সিনোভ্যাকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা কোভিশিল্ড দিয়ে গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে গণটিকাদান শুরু করেছিল সরকার। কিন্তু ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ রাখায় অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের তোড়জোড় শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে গত এপ্রিলের শেষ দিক থেকে দেড় মাসের মধ্যে চারটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেল। চীন সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে সিনোফার্মের কিছু টিকা পাওয়ার পর বাংলাদেশে তা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে স্পুটনিক-ভি কেনার জন্য সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আর ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম কোভ্যাক্স থেকে। সিনোভ্যাকের টিকা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির বলেন, ‘সিনোভ্যাকের সঙ্গে আগে থেকে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। তারা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে জরুরি ব্যবহারের আবেদন করতে বলেছিল, আমরা করেছিলাম। তবে এ টিকা উৎপাদন কিংবা আমদানির কোনো পরিকল্পনা আমাদের এখন পর্যন্ত নেই।’

চীনা টিকার দাম বলার পর অতিরিক্ত সচিবকে ওএসডি : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আকতারকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব সম্প্রতি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের পর এক ব্রিফিংয়ে শাহিদা আকতার প্রতি ডোজ টিকার দাম কত হচ্ছে, সেটিও জানিয়েছিলেন। এ দাম জানানোর পর টিকা নিয়ে কিছুটি জটিলতা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১ জুন শাহিদা আকতারকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে অন্য আদেশের মতো জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, মূলত টিকার দাম জানিয়ে দেওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণেই তাকে ওএসডি করা হয়েছে।

চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ বা সিনোফার্ম থেকে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের দেড় কোটি টিকা কিনতে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় প্রথম চালানে সিনোফার্মের ৫০ লাখ টিকা জুনে দেশে আসার কথা। তিন মাসে সিনোফার্মের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কিনতে দুই পক্ষের মধ্যে তিনটি চুক্তি সইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে জটিলতা নেই চীনের সঙ্গে : রাশিয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাসের টিকা স্পুটনিক-ভি কেনার চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ইগনাতোভ। একই তথ্য জানিয়েছেন  পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনও। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, টিকা নিয়ে চীনের সঙ্গে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ইগনাতোভের বিদায়ী সাক্ষাৎ শেষে তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান। রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ইগনাতোভ বলেন, আমরা টিকা সরবরাহে এবং আপনাদের জনগণকে কভিড মোকাবিলায় সহায়তায় প্রস্তুত। চুক্তিটা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে এবং ভালো মতোই হবে। এটা খুব দ্রুতই হবে। কবে নাগাদ টিকা পাওয়া যেতে পারে- এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, যৌথ উৎপাদন ও সরবরাহ, দুটো দিকই আছে। এটা জটিল প্রক্রিয়া, তবে কোনো সমস্যা হবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি হবে। তবে কখন হবে না হবে সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। আমরা লাইন করিয়ে দিয়েছি, বাকিটা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাজ। ক্রয় এবং যৌথ উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। আমরা বলেছি টিকা কিনতে চাই এবং তোমরা কোনো বাধা ছাড়াই জোগান দাও। চীন আমাদের বলেছে, তারা কোনো বাধা ছাড়াই টিকা সরবরাহ করবে। চীনের সঙ্গে উৎপাদনের বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাদের দেশ থেকে সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য দল আসবে। তারা এসে সরেজমিন দেখে বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা রপ্তানি বন্ধ করার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের লক্ষ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। মার্চ থেকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়। এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে যথাক্রমে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সরকার। রাশিয়া থেকে ১ কোটি টিকা কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার আলোচনা শেষ করে বাংলাদেশ জুলাই থেকে স্পুটনিক-ভি টিকার প্রথম চালান পেতে আগ্রহী। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব টিকা দেশে আসবে। অন্যদিকে টিকা কেনার চলমান আলোচনা ও প্রচেষ্টার মধ্যে রোববার চীনের দ্বিতীয় টিকা হিসেবে বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সিনোভ্যাক লাইফ সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা।

সর্বশেষ খবর