মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

চলছে অঘোষিত সাইবারযুদ্ধ

জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসার শেষ নেই, লন্ডন নিউইয়র্কে ঘাঁটি করে বিশাল বাজেট, আগামী ভোটের আগে সরকারকে বিব্রত ও সমাজে অস্থিরতাই টার্গেট

সাঈদুর রহমান রিমন

চলছে অঘোষিত সাইবারযুদ্ধ

গুজবনির্ভর প্রপাগান্ডায় মেতেছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচারের যেন শেষ নেই। একের পর এক কল্পকাহিনি জন্ম দিয়ে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সর্বত্র। বিশাল বাজেট নিয়ে লন্ডন, নিউইয়র্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘাঁটি গেড়েছে তারা। শেখ হাসিনার সরকার যত দিন ক্ষমতায় আছে তত দিনই বিরতিহীনভাবে গুজব আর উত্তেজনা ছড়ানোর প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। সরকারকে বিব্রত করার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা পর্যায়ের ব্যক্তিদেরও টার্গেট করা হয়েছে। এ চক্রের যাবতীয় অপপ্রচারে সহায়তা করছে বাংলাদেশে থাকা সরকারবিরোধী মহল।

জানা যায়, অপপ্রচারকারী চক্রটি নামে-বেনামে কথিত ইউটিউব চ্যানেল, আইপি টিভি, অনলাইন পোর্টালসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা রকম পেজ, গ্রুপ, ইভেন্ট খুলে বসেছে। বিদেশের ঘাঁটিগুলো থেকে ব্রেকিং নিউজের নামে সকাল-বিকাল নানা গুজবের ভিডিও বানানো হচ্ছে। হঠাৎ আবিষ্কৃত এসব গায়েবি খবর তৈরি করে নিমেষেই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এজেন্টদের কাছে। সেসব কুৎসিত প্রপাগান্ডা এ-দেশীয় সহযোগীরা নিজেদের অনুমোদনহীন অনলাইন চ্যানেল, পেজ ও গ্রুপে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রকাশ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চক্রটি একের পর এক গুজব ছড়িয়ে সরকারকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে অস্থিরতা তৈরি করাই তাদের উদ্দেশ্য। চক্রটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মূল টার্গেট করে প্রপাগান্ডা শুরু করলেও এখন রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, এমনকি স্থানীয় পর্যায়ের যেনতেন ঘটনায়ও সরকারের ওপর দায় চাপাতে তৎপর রয়েছে।

একাধিক সরকার-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, অপপ্রচারকারী চক্রের অধিকাংশ সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা যুক্তরাজ্যের লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে অবস্থান করছে। তারা নামে-বেনামে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি খুলে নানা কল্পকাহিনি প্রকাশ ও প্রচার করে চলেছে। তাদের এ-দেশীয় সহযোগীরা ভুয়া তথ্যের নানা নাটকীয় কাহিনি শেয়ার করে অনলাইন ব্যবহারকারী হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। মুহূর্তেই ডাহা মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের প্যানিক সৃষ্টি করতেও দ্বিধা করছে না তারা। কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আক্রমণ করছে তারা অবাধে। সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে, আবার কখনো সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টি করতে গিয়ে চালাচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার-প্রচারণা। তাদের তথ্যসন্ত্রাস ও সাইবার আক্রমণ থেকে এ দেশের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে কোনো পেশার মানুষই রেহাই পাচ্ছেন না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনসহ জঘন্য সব ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে হেয় করা হয়। এতে যে-কেউ মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সরকারবিরোধী এই সাইবার চক্রটি দেশের বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ, র‌্যাব ও সশস্ত্র বাহিনীকেও বাদ দিচ্ছে না। লন্ডনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতায় গুজব তৈরি, সরবরাহ ও তা ভাইরালে পরিণত করার কর্মকান্ডটি রীতিমতো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। দেশে নানা অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়া কথিত সংবাদকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা বেকারত্ব জীবনে বেঁচে থাকার অভিনব পথ হিসেবে গুজব ছড়ানোর কর্ম বেছে নিয়েছে পেশা হিসেবে। এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সেখানে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশন ও সরকারদলীয় নেতারা কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনলাইন প্রপাগান্ডা বন্ধ দূরের কথা, বিদেশ থেকে প্রকাশিত কট্টরপন্থি বাংলা সাপ্তাহিকসমূহে সরকারবিরোধী যেসব কল্পকাহিনি ও বিদ্বেষমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধেও কোনো প্রতিবাদ বা পাল্টা কোনো অবস্থান নিতে পারছেন না তারা। সূত্র জানায়, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারবিরোধী এ সাইবার প্রপাগান্ডা পরিচালনা নজরে রেখেছে। একাধিক সংস্থা এসব প্রপাগান্ডার গতি, প্রকৃতি ও সম্পৃক্তদের বিশেষ নজরদারির জন্য অঘোষিত উইং খুলে তদারকি পর্যন্ত চালাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। সংশ্লিষ্ট উইংয়ের তথ্যানুযায়ী, রাষ্ট্র, সরকার ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে টার্গেট করে গত দুই মাসে সাড়ে ৪ শতাধিক গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই শ গুজবই রটানো হয়েছে লন্ডন থেকে। একই সময়ে নিউইয়র্ককেন্দ্রিক ওই চক্রের সদস্যরা প্রায় এক শ গুজবের জোগান দিয়েছেন। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী ও তাদের দেশীয় সহযোগীরা আরও দেড় শতাধিক বিতর্ক উসকে দেওয়ার পাঁয়তারা চালিয়েছেন। গুজব সৃষ্টিকারীরা কিছুসংখ্যক সংসদ সদস্য ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সর্বজনসম্মানিত ব্যক্তিকে ঘিরে নগ্নতা জুড়ে এমন বাজে বাজে কল্পকাহিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশে জন্ম নেওয়া এসব সাইবারযোদ্ধার নানা প্রপাগান্ডা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে তথাকথিত আইপি টিভি, অনলাইন চ্যানেল, ইউটিউব চ্যানেল, ওয়েব পোর্টাল, নকল অনলাইন পত্রিকা রয়েছে দেশজুড়ে। যে-কেউ ডোমেইন, হোস্টিং কিনেই রাতারাতি তথাকথিত টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পত্রিকার জন্ম দিচ্ছেন। তারা যা খুশি তা লিখে চলেছেন বাধাহীনভাবে। সরকারবিরোধী অনলাইন চক্র প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার প্রপাগান্ডায় লিপ্ত হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঘিরে সংঘবদ্ধ চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এমন জঘন্য সব অপপ্রচার চালায়, যা এক নজর দেখেই অনেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা জাসদ স্বনামে রাজনীতি করলেও নিউইয়র্কে জামায়াত বিভিন্ন ছদ্মনামে ডজনখানেক সংগঠনের আড়ালে কাজ করে থাকে। লন্ডন, নিউইয়র্কের গুজব ছড়িয়ে বেড়ানো অনলাইন পোর্টালগুলো জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতাতেই প্রকাশিত হয়। ফলে ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কেও বাংলাদেশ দূতাবাস দেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। দেশের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রেও কোনো রকম বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না কাউকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেশ থেকেই বিভিন্ন আইডির বিপরীতে নানা নগ্নতার দৃশ্য-সংবলিত কট্টর ভাষায় আক্রমণাত্মক অসংখ্য পোস্ট ও ভিডিও আপলোড হচ্ছে নিত্য দিন। সেসব অপপ্রচারকারীকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কেউ কোনো ভূমিকা রাখছে না। দায়িত্বশীলরা অবৈধ আইপি টিভি, অনলাইন চ্যানেল, ফেসবুক লাইভ, টুইটারের মন্তব্য পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর