মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রেজিস্ট্রারের আওতায় এলে গুজব বন্ধ সম্ভব হবে

ড. হাছান মাহমুদ

রফিকুল ইসলাম রনি

রেজিস্ট্রারের আওতায় এলে গুজব বন্ধ সম্ভব হবে

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ইউটিউব-ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আইনের আওতায় এসেছে। আমরাও এসব সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোকে আমাদের দেশের রেজিস্ট্রার কোম্পানি    করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তারা রেজিস্ট্রারের আওতায় এলে গুজব ও সামাজিক     অস্থিরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে। কারণ তখন তারা আমাদের দেশের আইনকানুন, নীতিমালা এবং আদালতের নিদের্শনা মানতে বাধ্য হবে। এই সার্ভিস প্রোভাইডারগুলো সরকারের আহ্‌বানে সাড়া দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি তথ্যমন্ত্রী। গতকাল সচিবালয়ে নিজ অফিসে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ফেসবুক-ইউটিউবের বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখানে তাদের কোনো অফিস নেই। এরই মধ্যে আমরা ফেসবুক ও গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা সাড়া দিয়েছে। আশা করি তারা দ্রুতই আমাদের দেশের রেজিস্টার কোম্পানির আওতাভুক্ত হবে। 

অতীতের কিছু সামাজিক গুজব সৃষ্টির উদাহরণ দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি শ্রেণি বর্তমান সরকার, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে গুজব রটানো ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভুয়া আইডি এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশ থেকে পরিচালিত হওয়ার কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘটিত অপরাধ দমনে আমাদের স্থানীয় আইন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে পারি না। এসব পেজের অ্যাডমিন বা ব্যবহারকারীরা বেশির ভাগই বিদেশে অবস্থান করে। ফলে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। এই মাধ্যম ব্যবহার করছে প্রতারকরাও। সে কারণেই আমরা সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোকে রেজিস্টার্ড কোম্পানি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাহলে এসব প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব বলে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আগে ছাত্রদের নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সময়ও একই অবস্থা করা হয়েছে। আবার পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ যখন শুরু হলো, তখন ছেলে ধরা গুজব রটানো হলো। অন্যদিকে হেফাজতের আন্দোলনের সময় বিদেশি ছবি দিয়ে আমাদের দেশের ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হলো। এভাবে বিভিন্ন সময় গুজব রটানো হয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না এই সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থাগুলো আমাদের দেশের আইনকানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

গুজব রটনাকারীদের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্‌বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণকে বলব, গুজব রটনাকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সচেতন হন। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরুন। কোনটা সত্য, আর কোনটা মিথ্যা যাচাই করে তারপর পক্ষ অবলম্বন করুন। গুজব ও অপপ্রচার দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য বড় বাধা। এসব বাধা দূর করতে জনগণকেই ভূমিকা রাখতে হবে। অপপ্রচার ও গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার কিন্তু বসে নেই। যারাই মিথ্যা গুজব রটাচ্ছে, সরকার চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এরই মধ্যে যারা চিহ্নিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও মিথ্যাচার অথবা অপরাধ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা বৈশি^ক সমস্যা। বিশে^র অনেক দেশকেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, এ দেশের একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। তারা নির্বাচনে ব্যর্থ, আন্দোলনে ব্যর্থ। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় হতাশায় নিমজ্জিত। তারা আন্দোলনের ডাক দিলেও নেতা-কর্মী মাঠে নামে না। সে কারণে এখন সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। আর তাদের মিত্র স্বাধীনতাবিরোধীদের দল, নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিদেশের মাটিতে বসে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা রাজনৈতিক মাঠে না থাকলেও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে সোচ্চার রয়েছে।

সর্বশেষ খবর