মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

গুজবকারীদের শনাক্তে সাইবার প্যাট্রলিং চলছে

কামরুল আহসান

আলী আজম

গুজবকারীদের শনাক্তে সাইবার প্যাট্রলিং চলছে

পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেছেন, গুজবকারীদের শনাক্তে নিয়মিত সাইবার প্যাট্রলিং করা হচ্ছে। পরে শনাক্ত আইডি বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) জানানো হয়। বিটিআরসি এসব আইডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ছাড়া গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা তৎপর রয়েছি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপনে এসব কথা বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

কামরুল আহসান বলেন, ২৪ ঘণ্টাই সিআইডির সাইবার মনিটরিং ইউনিট কাজ করছে। প্রতিদিনই আমরা সাইবার অপরাধীদের আইডি বন্ধে বিটিআরসিকে জানাচ্ছি। ফেসবুক, ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা সামাজিক অস্থিরতার ভিডিও শেয়ার বা বার্তা ছড়াচ্ছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি গুজব সৃষ্টিকারী এসব ভিডিও বা বার্তার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদেরও খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ব্যাপকহারে বেড়েছে উল্লেখ করে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, রাঘববোয়ালরা এসব অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলছে। অনলাইন জুয়াও বেড়েছে। গুরুত্ব অনুযায়ী সাইবার অপরাধের কিছু মামলা আমরা তদন্ত করছি।

যেসব আইডি থেকে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও দেশবিরোধী প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো আমরা মনিটরিং করছি। আগে পারিবারিক বন্ধন বা সম্পর্কের বিচ্যুতি ঘটলে যে অপরাধগুলো হতো সেগুলো এখন সাইবারে চলে আসছে। আগে মুখ দিয়ে গালিগালাজ করত, এখন ফেসবুকে ডিজলাইক, লাইক, শেয়ার অথবা কমেন্টের মাধ্যমে এগুলো করছে। সব বিষয় একটা ভার্চুয়াল ফরমেটে চলে আসছে। সামাজিক অবস্থানকে বিচ্যুতি করার জন্য যে ক্রাইমগুলো হয় সেটার মাত্রা বেশি।

সাইবার জগতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে নিয়মিতভাবেই দেশি-বিদেশি অনেক চক্র মোটা অঙ্কের অর্থ লুটে নিচ্ছে জানিয়ে কামরুল আহসান বলেন, কম্পিউটার অ্যানাবল ক্রাইমের মাত্রা বেশি, যেখানে সামাজিক অংশের ক্রাইম জড়িত। ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ব্যাপক আকারে হচ্ছে। বিগো লাইভ, টিকটকসহ এ ধরনের অ্যাপস সামনে রাখছে অপরাধীরা। কিন্তু এর নেপথ্যে বড় ধরনের ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম জড়িত।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) হচ্ছে। এটা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। এর পরও সাইবার স্পেস ব্যবহার করে হঠাৎই ভুঁইফোড় সংগঠন তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে এক নামে কিন্তু বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে এমএলএমের মাধ্যমে মানুষকে লোভনীয় অফার দিচ্ছে। প্রচুর মানুষকে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং মানি লন্ডারিং ক্রাইমের পথ তৈরি করছে।

সাইবারে জিডিটাল মানির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে বিটকয়েন অন্যতম। ডায়মন্ড, গোল্ড, সিলভার নামে ভার্চুয়াল চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে। পরে এগুলো বিক্রি করে। এরপর ‘বিকাশ’ বা ‘রকেট’-এর মাধ্যমে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ চক্রের মূল হোতারা কেউ দেশে নেই। তারা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। গুগুল, ফেসবুকসহ এ ধরনের সাইটের সরকারের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। এ ধরনের সাইট ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার মধ্যে এলে তাদের সঙ্গে গভীরতায় কাজ করা যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই সাইবার বিশেষজ্ঞ বলেন, সাইবার জগতের বড় সমস্যা হচ্ছে জুয়া। সরকার এখন পাবজি বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে। সাইবার জুয়ায় কোনো কোনো জেলার অবস্থা বেশ খারাপ। উত্তরবঙ্গের অনেক জেলার লোকজন জুয়াপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। তারা দিনে রাতে এসব সাইটে ঘোরাঘুরি করছেন। এটা তাদের বাবা-মা বুঝতে পারছেন না। কী প্রক্রিয়ায় এ জুয়া আসক্ত বন্ধ করা যাবে। এটা অপরাধ। যা সাইবার ওয়ার্ল্ডে ব্যাপকভাবে আসছে।

সর্বশেষ খবর