বুধবার, ৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

কী হবে ১৪ লাখ টিকাগ্রহীতার

প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অনিশ্চিত অপেক্ষা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কী হবে ১৪ লাখ টিকাগ্রহীতার

১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। অধিকাংশ কেন্দ্রে বন্ধ হয়ে গেছে টিকা কার্যক্রম। এ টিকার জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হলেও এখনো মেলেনি কোনো সাড়া। তাই এ সংকট কবে নাগাদ কাটবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

দেশে এখন মাত্র ২২টি কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কভিশিল্ড। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা এ টিকা গত মার্চের শেষ দিকে রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশে তৈরি হয় সংকট। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে এখনো অনেকে কেন্দ্রে যাচ্ছেন। কিন্তু টিকা না থাকায় তাদের ফিরে আসতে হচ্ছে।

রাজধানীর ৪৭ কেন্দ্রের ২৫টিতে এখন টিকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কোন কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে আর কোন কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে না তা সাধারণ মানুষ জানে না। এ ছাড়া ৩৯ জেলায় টিকা ফুরিয়ে গেছে। এসব জেলা সদরে ও উপজেলা হাসপাতালে টিকা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা অনেক মানুষ জানে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, ‘মোট কতটি কেন্দ্রে টিকা ফুরিয়ে গেছে সে তথ্য আমাদের কাছে আছে কিন্তু একটি করে কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে জানানো সম্ভব নয়। যেসব কেন্দ্রে টিকা ফুরিয়ে গেছে তারা বাইরে নোটিস ঝুলিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে। মুঠোফোনে মেসেজ না পেয়ে অনেকে কেন্দ্রে যাচ্ছেন। আবার অনেকে নির্ধারিত দিনের পর টিকা নিতে যাচ্ছেন। এরা টিকা না পেয়ে ফিরে আসছেন।’

দেশে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪২ লাখ ২৮ হাজার ৭৪১ জন। প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো টিকা সরকারের কাছে নেই। মূলত যারা ১৪ মার্চের পর প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এ টিকা প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছিল। তবে তা ১২ সপ্তাহ পর            পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দেওয়া যায়। সে হিসেবে এ ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে হলে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান আনতে হবে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথম ডোজের গণটিকা দান কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয় এর আট সপ্তাহ পর ৮ এপ্রিল। টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশের হাতে মোট ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা ছিল। ইতিমধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিশ্চিত করতে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৩০ ডোজ টিকা প্রয়োজন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী টিকার মিক্সড ডোজ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণাও চলছে। যেমন প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজে অন্য কোনো কোম্পানির টিকা দেওয়া যাবে কি না? অর্থাৎ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা দেওয়া যাবে কি না? সম্প্রতি স্পেনের এক জার্নালে প্রকাশিত লেখায় দেখা গেছে, তাদের বিজ্ঞানীরা মিশ্র ডোজ নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং দ্বিতীয় ডোজ মডার্না কিংবা ফাইজারের মতো এমআরএনএ টিকা দেওয়ার ফলে মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডি ৩০-৪০ গুণ বেড়েছে; যা করোনা প্রতিরোধে সহায়ক। আবার যারা প্রথম ডোজ এমআরএনএ ও দ্বিতীয় ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন সে ক্ষেত্রেও অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া অনেকের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

 বিভিন্ন দেশ থেকে এ টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে টিকার মিক্সড ডোজ নিয়ে গবেষণা চলছে। সরকার এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখতে পারে। করোনা থেকে বাঁচতে টিকাদান জরুরি।’

সর্বশেষ খবর