বুধবার, ৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়ার মতো শুধু বঙ্গবন্ধুই ছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়ার মতো শুধু বঙ্গবন্ধুই ছিলেন

রেহমান সোবহান

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, কে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, এসব আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। আর স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজন মাত্র লোকই যোগ্য ছিলেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর মতে, ছয় দফার পথ ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণের ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

একাত্তরের উত্তাল ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে সোমবার ‘৬ দফা বাঙালির মুক্তি সনদ’ শিরোনামে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এ অর্থনীতিবিদ বলেন, পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর থাকবে। সেই ছয় দফা দাবি আদায়ে ৭ জুন ঢাকাসহ সারা বাংলায় আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয়। সূচনা হয় ব্যাপক গণজাগরণের। হরতালে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। গ্রেফতার হন অনেকে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, সামরিক-আমলাতন্ত্র ও মুষ্টিমেয় জমিদারের হাতে ছিল পুরো পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ। পূর্বপাকিস্তানে বসবাসরত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল সব দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার। এ কারণে স্বায়ত্তশাসনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু বহু আলোচনার প্রেক্ষাপটে ছয় দফা ঘোষণা করেন। তিনি দেশে ফিরে ছয় দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ছয় দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। ছয় দফা ঘোষণার পর বাঙালির অধিকার আন্দোলন ক্রমান্বয়ে গ্রামেগঞ্জে এবং সব পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। জনগণের রাস্তায় নেমে আসায় পাকিস্তানিরা ভীত হয়ে পড়েছিল। এ কারণে পাকিস্তানিরা এটাকে সহজভাবে নেয়নি। তারা নির্যাতন চালায়, অনেককে হত্যা করে এবং গণগ্রেফতার শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়ে ডেমরা থেকে নৌকায় কালিগঞ্জ যাওয়ার একটি ঘটনার স্মৃতিচারণা করে রেহমান সোবহান বলেন, ওই এলাকায় এক লাখের মতো শ্রমিক জড়ো হয়েছিল। যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখেছি। ট্যাক্সি ড্রাইভার হোক, রেস্তোরাঁর বেয়ারা হোক, সবাই জানত শেখ মুজিব একটা ক্যাম্পেইনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, অন্য কোনো বাঙালি নেতার মতো ছিলেন না বঙ্গবন্ধু। তিনি তার অবস্থানে দৃঢ় ছিলেন। জনগণের ম্যান্ডেট তাঁর ছিল। পাকিস্তানিরা বুঝে গিয়েছিল, তিনি কিছুতেই ছাড় দেবেন না। ওই পর্যায়ে গিয়ে তারা বুঝল, হত্যাযজ্ঞ চালানো ছাড়া উপায় নেই। পাকিস্তানিরা ছয় দফা ধরে কখনো আলোচনায় আগ্রহী না হলেও শেষ মুহূর্তে ২৫ মার্চের আগে আগে তারা আলোচনায় আসে। সে সময় তারা এটাকে গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে সৈন্য সমাবেশের জন্য ধূম্রজাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নামেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠিত হচ্ছিল জানিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, মার্চ মাসেই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। উনার নামেই তো আমি নয় মাস আন্তর্জাতিকভাবে আন্দোলন করেছি। পুরো পৃথিবীর সাংবাদিক সমাজ তখন ঢাকায় বসে ছিল। ফলে বাংলাদেশ কী, সেটা আমাদের প্রচার করার দরকার ছিল না। সবাই এটা জানত।

সর্বশেষ খবর