বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মামলা নিষ্পত্তি হয় না নির্ধারিত সময়ে

আরাফাত মুন্না

কক্সবাজারের রামু উপজেলার এক নারীকে নেপালে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায় মানব পাচারকারীরা। ২০১৪ সালের আগস্টে তাদের খপ্পরে পড়ে ওই নারীর ঠাঁই হয় খুলনার একটি যৌনপল্লীতে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পাঁচ মাস পর ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিন মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে রামু থানায় একটি মামলা করে মেয়ের পরিবার। ওই বছরের অক্টোবরে তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। এখন পর্যন্ত এ মামলার বিচার শুরু হয়নি এবং কোনো আসামি ধরা পড়েনি।

শুধু এ মামলাটিই নয়, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা থাকলেও বছরের পর বছর ঝুলে থাকে এসব মামলা। নারী ও শিশুসহ মানব পাচারের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৩৫টি মামলা হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৮১০টি।

মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার পেছনে মূলত সাক্ষী হাজির না হওয়াকে দায়ী করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে আইনজ্ঞরা বলেন, এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পুলিশকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই নারী পাচার বা মানব পাচারের ঘটনা কমে আসবে।

২০১২ সালের ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের জন্য মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদন্ড এবং অন্যূন ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান আছে। এ আইনের ২১(১) ধারায় এসব মামলার বিচারে আলাদা ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কথা বলা আছে। আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এ ছাড়া ১৯(৬) ধারায় আছে, এসব মামলা তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল থাকবে। আইন হওয়ার আট বছরের মাথায় গত বছর দেশে সাত বিভাগীয় শহরে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম শুরু হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে এসব ট্রাইব্যুনালে। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন হওয়ার পর প্রায় ৬ হাজার মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধে আগের মামলাসহ এ আইনে মোট ৬ হাজার ৭৩৫টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে চলতি বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৮১০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৩ মামলায় আট আসামির মৃত্যুদন্ড এবং ২৯৯ আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ৪০৯ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। ৫৭৭ মামলায় খালাস পেয়েছেন ১ হাজার ৭১৬ জন।

মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নারী ও শিশু পাচারসহ মানব পাচার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে দেশের সাত বিভাগীয় শহরে গত বছর ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো যথাযথ সময়ে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারছে না। এ জন্য মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আসামি পক্ষ যেন বারবার সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করতে না পারেন, এ জন্য মুলতবি ছাড়া মামলা পরিচালনা করতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদেরই বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে পুলিশকেও সময়মতো চার্জশিট দাখিল করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নারী ও শিশু পাচার বাড়ছে বলে মনে করছেন মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী। তিনি বলেন, যথাযথ মনিটরিং হচ্ছে না। নানা জটিলতায় মামলাগুলো ঝুলছে। জেলা পর্যায়ে মনিটরিং করতে হবে। সাত বিভাগে গঠন করা ট্রাইব্যুনালগুলো প্রয়োজনে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ সচল করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর