বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

অর্থনীতিতে দরকার রাষ্ট্রের বড় ভূমিকা

প্রতিদিন ডেস্ক

অর্থনীতিতে দরকার রাষ্ট্রের বড় ভূমিকা

অমর্ত্য সেন

মহামারীর সময় দুটি জিনিসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার খুবই অবহেলা করেছে। এক, জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে খুব বড় ভূমিকা আছে, সেটা উপেক্ষা করা। সরকারি সমর্থক ও তাদের সমমনা অর্থনীতিবিদরা বলে গেছেন, এসব নিয়ে এখন চিন্তার কারণ নেই। মানুষের টাকা হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব হবে। তবে এ ধারণার মধ্যে চিন্তার অভাব অত্যন্ত প্রকট। কারণ এ নীতিতে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেতে কেবল দুর্দশার মধ্যে পড়েন তা নয়, বরং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বড় সমস্যা হলে আমাদের তা মোকাবিলা করার ক্ষমতাও একেবারে কমে যায়।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ আলোচনা করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। কোনো সমস্যা হলে কী করা যায়, সে বিষয়ে ফলপ্রসূ চিন্তা করা যায়। ভারতের যেসব অঞ্চলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো- যেমন কেরালা- সেখানে এটা দেখা যায়। একটি ঘটনা দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেন অমর্ত্য সেন।

তিনি বলেন, ‘একবার ইন্ডিয়ান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক হচ্ছিল  কেরালায়। আমি ছিলাম বোধ হয় কোভালমে। সেখান থেকে গাড়ি করে যখন যাচ্ছি, আমার একটু কাশি ও শারীরিক যাতনা হচ্ছিল। এর জন্য কিছু ওষুধ কিনতে হলো। ওষুধ পাওয়া গেল একটি মুদির দোকানে। দোকানদার জিজ্ঞাসা করলেন, আমি যে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধটা নিলাম, তাতে আমার কোনো অ্যালার্জি আছে কি না, সেটা কি আমি জানি? এর থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায়, তাদের মধ্যে অসুখ-বিসুখ, ওষুধ ও অসুখ প্রতিরোধের মতো বিষয়ে আলোচনা হয়। সেটার খুবই দরকার, বিশেষ করে এমন মহামারীর সময়। লোককে সবকিছু বেটে খাইয়ে দিতে হবে এমন না, তারা নিজেরাও যাতে অনেকটা ভাবতে পারেন, সেটা দরকারি।’

 

অমর্ত্য সেন বলেন, যারা অবস্থাপন্ন, শুধু তাদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হলে এবং অন্যদের অবহেলা করা হলে, অবহেলা করার এই নীতি স্বাভাবিক বলে মনে হয়। যখন চার ঘণ্টার নোটিসে প্রথম লকডাউন করা হলো, তখন ভাবাই হলো না, যাদের খেটে খেতে হয়, তারা কোত্থেকে কাজ পাবেন, মজুরি কোত্থেকে পাবেন, তাদের খাবার-দাবার আসবে কোত্থেকে এবং তারা ওষুধপথ্যই-বা কীভাবে কিনবেন।

ভারতের টিকা কিনতে হচ্ছে- এ কথা শুনে বিদেশিরা অবাক! সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গ উঠলে অমর্ত্য সেন বলেন, এটাতে চিন্তার মারাত্মক গ-গোল দেখা যায়। যে রকম অর্থনীতিই হোক না কেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে তো বলা হবেই যে এই জিনিসগুলো সবাইকে বিনামূল্যে দেওয়া হোক। এমনকি রক্ষণশীল অর্থনীতিতেও এটা পরিষ্কার, যে জিনিসগুলোর ব্যবহারে শুধু নিজের নয়, অন্যদেরও উপকার হয়- সেগুলো বিনামূল্যে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি জোরালো। টিকা এর খুব ভালো দৃষ্টান্ত। কারণ যিনি টিকা নিচ্ছেন, তার কিছুটা উপকার নিশ্চয়ই হচ্ছে। কিন্তু আরও বড় কথা হলো, এটি ছাড়া এখন সমাজের সবাইকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এমন নয় যে যুক্তরাষ্ট্র খুব সমাজতান্ত্রিক দেশ হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের কাছেও এটা খুবই স্পষ্ট যে টিকা বিনা পয়সায় দেওয়া দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর