শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মানুষের উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে

-ডা. মো. গোলাম রাব্বানী

জিন্নাতুন নূর

মানুষের উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে

আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমেই ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের ভিতর দুর্বলতা বাড়ছে। দিন দিন মানুষের ভিতর উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট বোর্ডের চেয়ারপারসন ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. মো. গোলাম রাব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের গবেষকরা আগে থেকেই ধারণা করেছেন যে, ২০৩০ সালে মানুষের মধ্যকার বিষণœতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মানুষের বিষণ্নতা ও আবেগীয় তাড়নার ফলে তার মধ্যে যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে এর ফলে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে।  মহামারীতে আমরা সবাই স্থবির হয়ে যাচ্ছি। আমাদের যে যোগাযোগ ব্যবস্থা, এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যাতায়াত, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা রপ্তানি-আমদানি সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব কিছুই সীমিতভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী দিনে একজন বেঁচে থাকবেন কি না এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। করোনার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট বের হচ্ছে আর মানুষ আরও বেশি দিশাহারা হয়ে যাচ্ছে। আবার মানুষ ধারাবাহিকভাবেই তাদের কাজ হারাচ্ছে। মানুষের পরিকল্পনার পরিধি কমে যাচ্ছে। দিন দিন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। জীবন-জীবিকার জন্য তাকে অস্থির হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। আবার করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এবং তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। প্রায় দেড় বছরের মতো আমরা বাচ্চাদের ঘরে বসিয়ে রেখেছি। এই শিশুরা তাদের প্রাপ্তি ও আকাক্সক্ষা নিয়ে সম্পূর্ণ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে শিশুরা খুবই হতাশ। এর ফলে অনেকের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। ২০১৯ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে আমরা দেখেছি যে, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য খুবই সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই অবস্থা আরও প্রকট হয়ে পড়েছে। এর ফলে মানসিক অস্থিরতা বাড়ছে। আর এই অস্থিরতা রোগে পরিণত না হলেও এই অবস্থা দিন দিন খারাপ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আবার ঘরে বসে থাকা ও নিত্যনৈমিত্তিক চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এতে করে আমাদের মানসিক শান্তি পরাস্ত হয়ে যাচ্ছে।

এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নিজেদের বুঝতে হবে। ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারীর মতো আরও অনেক বিপর্যয় মানুষকে সামাল দিতে হবে এবং এজন্য মানসিক প্রস্তুতিও নিতে হবে। মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থেও পৃথিবীর শেষ পরিণতি সম্পর্কে বলা আছে। আমরা যদি এগুলো গবেষণা করি তাহলে দেখব, পৃথিবী থেকে যে পরিণতি আমরা লাভ করছি সেভাবে আমাদের দায়ভারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য আমাদের অক্ষমতার যে দায়ভার তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং পরিকল্পনা করতে হবে। এ জন্য কাউন্সেলিং, চিকিৎসা যা-ই প্রয়োজন হোক না কেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর