রবিবার, ২০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে যেভাবে হত্যা করে হিফজুর

শাহ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বাইরের কোনো দুর্বৃত্ত নয়, হিফজুর রহমানই খুন করেছেন তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে। ঘরের বঁটি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে তিনি তাদের খুন করেন। পরে সন্দেহের তীর তার দিক থেকে সরাতে নিজের শরীরেও দা দিয়ে আঘাত করে আহত হন। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কোপানোর সময় তার মনে হয়েছে তিনি মাছ কাটছেন, এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন পুলিশের কাছে।

গতকাল নিজ কার্যালয়ে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত আলেমা বেগমের বাবার মামলায় গতকাল গ্রেফতার দেখানো হয়েছে হিফজুর রহমানকে। আজ হাসপাতাল থেকে তাকে আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি জানান,  ঘটনার পূর্বাপর নানা ঘটনা ও আলামতে নিশ্চিত হওয়া গেছে হিফজুর  রহমানের স্ত্রী আলেমা বেগম, শিশু সন্তান মিজানুর রহমান ও আনিসাকে বাইরের কেউ খুন করেনি। দরজা ভেঙে কেউ ঘরে ঢোকেনি। ঘটনার পর ঘরের ভিতর থেকে রক্তমাখা একটি বঁটি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বঁটি দিয়ে হিফজুর স্ত্রী-সন্তানকে খুন করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, হিফজুর সিএনজি অটোরিকশা করে এলাকার বিভিন্ন দোকানে পান সরবরাহ করতেন। ঘটনার দিন ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে ৫টা ৩৭ মিনিটের মধ্যে তিনি তিনজনকে ফোন করেছেন। এর মধ্যে এক দোকানদারকে ফোন করে জানান, তিনি আজ পান নিয়ে আসবেন না। আর সিএনজি অটোরিকশা চালক ও তার পরিচিত একজনকে বলেন, তিনি অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। উদ্ধারের সময় হিফজুর খাটের মধ্যে  শোয়া ছিলেন। তিনি জানান, হাসপাতালে হিফজুরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনি একেক সময় একেক কথা বলছেন। মাঝে-মধ্যে মানসিক রোগীর মতো কথা বলছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, তার মানসিক সমস্যার কোনো প্রমাণ পাননি। হত্যাকা  প্রসঙ্গে হিফজুর যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তা হচ্ছে তিনি পুলিশকে বলেছেন, ‘ওই রাতে তার ঘরে অনেক মাছ এসেছিল। তিনি অনেক মাছ কেটেছেন’। হিফজুর হত্যার ঘটনাকে ব্যঙ্গ বা রসিকতা করে মাছ কাটার কথা বলছেন কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যাবে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর। আজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দেবেন। এরপর তাকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে। পুলিশ সুপার জানান, হিফজুরের স্ত্রী আলেমা বেগম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। স্ত্রী অসুস্থ হলে তিনি স্থানীয় আতা মোল্লা নামের এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যেতেন। কয়েক দিন আগে ওই কবিরাজের কাছে স্ত্রীকে নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদে হিফজুর জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর জন্য তিনি অনেক টাকা খরচ করেছেন। স্ত্রীর অসুস্থতা ও চিকিৎসা খরচ নিয়ে হতাশা থেকে হিফজুর এ কা  ঘটিয়েছেন কি-না তাও তদন্তের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া শ্যালিকার বিয়েতে যাওয়া, না যাওয়া নিয়েও স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকালে সিলেটের গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি গ্রামের নিজ ঘর থেকে হিফজুরের স্ত্রী আলেমা বেগম, শিশুসন্তান মিজানুর রহমান ও আনিশার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর