শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকার জন্য ঘুরছেন প্রবাসীরা

এনআইডি ছাড়াই বিএমইটির নিবন্ধন ও পাসপোর্ট দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের আশ্বাস

জুলকার নাইন

গাইবান্ধার লিয়াকত মন্ডল। ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। পাঁচ বছর পর পর ছুটিতে আসেন। এবারও এসেছেন গত জানুয়ারিতে। কিন্তু কাল টিকার জন্য বিক্ষোভ করছিলেন ঢাকার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে। লিয়াকত বলেন, ছুটিতে দেশে আসার আগে সৌদি আরব থেকে একটি টিকা দিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন দেশে এসে টিকা পাচ্ছি না। আরেকটি টিকা পেলেই সৌদি গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। ৮০ হাজার টাকা খরচ থেকে আমরা বেঁচে যেতাম। টিকা নিয়ে গেলে সরাসরি কাজে ঢুকতে পারব। নারায়ণগঞ্জের মানিকও থাকেন আরব আমিরাতে। গতকাল তিনিও ছিলেন বিক্ষোভের সামনের সারিতে। মানিক জানালেন, টিকা ছাড়া দুবাইতে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। এদিকে এক মাস পর আমার ছুটি শেষ হয়ে  যাবে। এখনো টিকা না পেলে কোনোভাবেই কাজে ফিরতে পারব না। শুধু লিয়াকত ও মানিক নয়, বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা টিকা নিতে পারছেন না জাতীয় পরিচয়পত্রের জটিলতায়। আরেকটি সমস্যা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দেশের টিকার প্রায়োরিটি তালিকা নিয়ে। একেক দেশ একেক ধরনের টিকাকে গ্রহণ করায় এবং সে ধরনের টিকা বাংলাদেশের গণটিকাদানের মধ্যে না থাকায় তৈরি হয়েছে সংকট। এ ধরনের সংকটের কারণে বিপাকে আছেন প্রবাসীরা। বিক্ষোভকারী প্রবাসীরা জানান, সৌ?দি আরব ও কু?য়েতগামী?দের অনেকে টিকার জন?্য রে?জি?স্ট্রেশন কর?লেও চী?নের সি?নোফা?র্মের যে টিকা তা?দের দেওয়া হ?বে তা গ্রহণ কর?ার বিষ?য়ে এখনো কো?নো নিশ্চয়তা দেয়?নি সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।

জানা যায়, করোনা মহামারী শুরুর আগে ও পরে কুয়েত থেকে প্রবাসীরা যারা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন, তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছেন। যার কারণে অনেকেরই আকামার বৈধ নিয়োগ মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে এসব প্রবাসী কর্মস্থলে ফেরত যেতে না পেরে নিঃস্ব হয়ে চরম হতাশায় দিনযাপন করছেন। এর মধ্যে যাদের এখনো মেয়াদ রয়েছে, তারাও দিন গুনছেন কখন কুয়েতে নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন। কিন্তু টিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের জটিলতার কারণে টিকা গ্রহণের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে আটকে পড়া কুয়েত প্রবাসী মনিরুল ইসলাম মারুফ বলেন, ইতিমধ্যেই কুয়েত সরকার, কুয়েত সিভিল এভিয়েশনকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য আগামী ১ আগস্ট থেকে কয়েকটি দেশের প্রবাসী কর্মীদের সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের টিকা প্রদান করতে হবে। কুয়েতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফাইজার, অক্সফোর্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন এই চারটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে। এর যে কোনো একটি নিয়ে কুয়েতে প্রবেশ করতে পারবেন প্রবাসীরা। এমন অবস্থায় বৃহত্তর স্বার্থে দেশে থাকা কুয়েত প্রবাসীদের অনুমোদিত চারটি টিকার যে কোনো একটি টিকা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। দেশে যেহেতু এই মুহূর্তে ফাইজারের টিকা আছে। তাই ফাইজারের টিকা প্রদান করলে দেশে আটকে পড়া ১৪ হাজারের মতো প্রবাসী কর্মী কাজে ফিরতে পারবেন। আমরা করোনা থেকে বাঁচার জন্য টিকা চাই না, চাই প্রবাসে গিয়ে রুজি করে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য। প্রবাসীদের পরিবার ক্ষুধার্ত হয়ে মরে যাওয়ার থেকে বেঁচে থাকার জন্য টিকা চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা কুয়েত প্রবাসীরা দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার কারণে বেশির ভাগ লোকের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। যার ফলে আমরা টিকা গ্রহণ করতে পারছি না। জাতীয় পরিচয়পত্রের পরিবর্তে পাসপোর্টের মাধ্যমে প্রবাসীদের টিকাসহ বাংলাদেশের সব পরিষেবা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

প্রবাসীরা বলেন, আমরা যারা টিকার জন্য যেতে পারছি না, তাদের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক ভাগ করে টিকা দিতে সরকারকে অনুরোধ করছি। এতে প্রবাসীদের পরিবার ও নিজের খুব উপকার হবে। কারণ আমরা খুব দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি এবং চলার পথে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হাতে হচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলছেন, যদি ভিসাপ্রাপ্ত বিদেশগামীদের মেডিকেল করতে আসার দিন প্রথম ডোজ টিকা এবং পরবর্তীতে বিদেশে যাওয়ার আগেই দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়ে পাঠানো যায়, তাহলে আর কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি থাকে না। অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইন বাবদ যে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং পুরনো কর্মীদের জন্য সরকার যে অর্ধেক খরচ বা ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকির ঘোষণা দিয়েছে তা আর দিতে হবে না। এতে করে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা বেঁচে যাবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন গতকাল জানিয়েছেন, বিদেশগামী কর্মীদের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়সের বাধা থাকবে না। সুরক্ষা অ্যাপে প্রবাসী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেখানে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর নিশ্চয়তা দিয়েছে। ২০ এবং তদূর্ধ্ব বছরের সবাই এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। প্রবাসীদের নিবন্ধন করতে এনআইডি লাগবে না। এক্ষেত্রে বিএমইটির নিবন্ধন এবং পাসপোর্ট দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এই আশ্বাস পাওয়া গেছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে সুরক্ষা অ্যাপে এই ব্যবস্থাটি হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের আরও আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, ফাইজারের যে টিকা আছে বর্তমানে, সেখান থেকে প্রবাসীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না তা তারা বিবেচনা করছে।

সর্বশেষ খবর