শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় মাসিক আয় কমেছে ৭৭ শতাংশ পরিবারের : গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ মহামারীতে গত বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়কালে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বল্প আয় ও অনানুষ্ঠানিক খাতে সম্পৃক্তরা চাকরি ও উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। ৭৭% পরিবারে করোনার কারণে গড় মাসিক আয় কমেছে এবং ৩৪% পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি অথবা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। এই সময়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পরিবারগুলো সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে পরিবারগুলোর গড় মাসিক সঞ্চয় ৬২ ভাগ কমে গেছে, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এই গবেষণায় করোনাকালে বিপরীতমুখী অভিবাসনের প্রভাবে বাংলাদেশের মধ্যম মানের শহর, উপজেলা এবং গ্রামীণ অঞ্চলে জনমিতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের ওপর পরিবর্তনগুলো তুলে ধরা হয়েছে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী পরিবারগুলোর ৬১ শতাংশেই তাদের অন্তত একজন সদস্য কভিড-১৯ মহামারীতে চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। আবার গ্রামাঞ্চল বা মফস্বল শহরে ফিরে আসা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের প্রায় ৭৭% মনে করেন কাজ বা চাকরি খুঁজে পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এই সময়ে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। কভিড-১৯ এর কারণে জনমিতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনসমূহ : নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য ও ফলাফল গত বুধবার (২৩ জুন) রাতে একটি ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক সংলাপের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও উন্নয়নকর্মীসহ বিশিষ্টজনরা মতামত ও পরামর্শ দেন। পাশাপাশি অগ্রাধিকারযোগ্য নীতিগুলো  চিহ্নিত করে কীভাবে সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের প্রোগ্রাম লিড লিয়া জেমোর এই অনলাইন আলোচনা সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ। সংখ্যাবাচক ও পরিমাণবাচক উভয় পদ্ধতি প্রয়োগে পরিচালিত গবেষণাটির সময়কাল ২০২০ সালের ১০-২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ৬ হাজার ৩৭০টি খানা অংশগ্রহণ করে। গত বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়কালকে ভিত্তিকাল (রেফারেন্স পিরিয়ড) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া খানাগুলোতে প্রায় ২৫% ফেরত আসা আন্তর্জাতিক অভিবাসী অভিবাসন ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যার পরিমাণ ৭৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। শতকরা ৪৪ ভাগ জানিয়েছেন, তারা কোনো উপার্জনমূলক কাজ পাননি। তাদের মধ্যে কিছু পরিবার সঞ্চয় উত্তোলন করে বা বিভিন্ন সম্পদ ভাড়া বা বন্ধক দিয়ে খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। জরিপকৃত পরিবারগুলোতে মহামারী চলাকালীন গড়ে মাসিক রেমিট্যান্স বা বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ ৫৮% হ্রাস পেয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রাম বা মফস্বল শহরগুলোতে ফিরে আসা পরিবারগুলো বিদ্যমান স্থানীয় অপ্রতুল সম্পদ বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪.৫৭% স্কুলের শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের গড় বয়স ৫-১৬ বছর। পুনরায় স্কুল খোলার পর যদি তারা তাদের পূর্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরত না যেতে পারে তবে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ফেরত আসা প্রায় ১৩.৩৫% জনগোষ্ঠীর (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় অভিবাসী) বয়স চল্লিশোর্ধ এবং ৪.৫৬%-এর বয়স পঞ্চাশের ওপরে যাদের ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ বিষয়টি স্থানীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর বিশেষ করে অসংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ফেরত আসা নারীদের মধ্যে বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী পরিবারগুলোর নারীরা করোনাকালীন বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, যা এই গবেষণায় উঠে এসেছে। যেমন কোনো উৎপাদনশীল বা আয়মূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে না পারা (৭৪%), রাস্তাঘাট ও বাজারে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে না পারা (২৬.৮%), স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা অনুভব করা এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অভাব বোধ করা (২০%), গৃহস্থালি কাজের চাপ বৃদ্ধি এবং শিশু লালন-পালন এবং সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে সমস্যা অনুভব করা (১৮%)।

 জরিপের ফলাফল অনুযায়ী- এই সময়ে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। বিয়ের সময় কনে কোন শ্রেণিতে পড়ত তার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় জরিপকালে অনুষ্ঠিত বিয়ের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় তিন চতুর্থাংশের বেশি (৭৭%) কনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে এবং ৬১% কনের বয়স ছিল ১৬ বছরের কম।

সর্বশেষ খবর