সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না

► সমাধান হয়নি দ্বিতীয় ডোজের জন্য অক্সফোর্ডের ১৫ লাখ টিকার ► আগামী মাসের শুরুতেই আসছে চীনের সিনোফার্মের ৫০ লাখ ► কোভ্যাক্স থেকে আসছে মডার্নার ২৫ লাখ টিকা ► দেশে টিকা উৎপাদন ঘিরে চলছে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না

দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের টিকা দিয়ে সীমিত পরিসরে চলছে গণটিকাদান। এ ছাড়া আগামী মাসের শুরুতেই চীন থেকে আসছে কেনা চুক্তির মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা। ১০ দিনের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে মডার্নার ২৫ লাখ টিকা আসার কথা আছে। কিন্তু ব্যবস্থা হয়নি অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার। টিকা নিয়ে অনেক আশার কথা থাকলেও হাতে না পাওয়ায় কাটছে না উৎকণ্ঠা। কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ লাখ ৬০০ ডোজ টিকা প্রবাসী শ্রমিকদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিকা সমস্যা সমাধানে দেশে টিকা উৎপাদন নিয়ে চলছে আলোচনা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে শতভাগ টিকা কার্যকর করায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনা সংক্রমণ। তাই দেশে টিকা উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টিকা প্রযুক্তি আনায় জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের সঙ্গে সরকারের দেড় কোটি ডোজ কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতেই দেশে সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসছে। প্রথম চালান দেশে পৌঁছলেই গণটিকাদান কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। এ ছাড়া ১০ দিনের মধ্যে আসবে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা। ২৫ জুন চুক্তির শর্ত অনুসারে প্রতি ডোজের মূল্যের হিসাবে দেড় কোটি ডোজের সমপরিমাণ টাকা চীনের ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। তারা টাকা পেয়েছে বলে নিশ্চিতও করেছে। তবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টিকা দেশে আনতে হবে। সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আগের উপহারের টিকা যেভাবে বিমানবাহিনীর মাধ্যমে আনা হয়েছিল, এই টিকাও সেভাবেই আসবে। চুক্তি অনুসারে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসবে। এ ছাড়া দেশে মজুদ সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ পাবে শিক্ষার্থীরা। প্রথমে মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।

সম্প্রতি কোভ্যাক্স থেকে ১০ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে কবে কখন সেই টিকা দেওয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এর আগে কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের ১ লাখ ৬০০ ডোজ টিকা এসেছে। এই টিকা ঢাকার তিন হাসপাতালে ২৪০ জনকে পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়েছে। বাকি টিকা প্রবাসী শ্রমিকদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চীনের টিকা অনুমোদন না হওয়ায় তাদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এর আগেও করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে টিকাদানের সিদ্ধান্ত নেয়। টিকাদানের প্রাথমিক পর্যায়েও দেড় কোটি মানুষকে টিকা দিতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুসারে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনতে চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা ছিল। তবে প্রথম মাসে ৫০ লাখ টিকা এলেও দ্বিতীয় মাসে আসে মাত্র ২০ লাখ ডোজ। এর পর থেকে আর টিকা আসেনি। টিকা না আসায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। কোভ্যাক্স থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও কবে না নাগাদ মিলবে তা জানা যায়নি। এর মধ্যেই প্রথম ডোজ নেওয়ার ১৬ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে অনেক টিকাগ্রহীতার। তাই বর্তমান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে কাটছে না শঙ্কা। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানসহ উন্নত দেশগুলোর মতো ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। দফায় দফায় টিকা কিনে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে শঙ্কা থেকেই যায়। তাই সমস্যা নিরসনে দেশে চলছে টিকা উৎপাদনের আলোচনা। ২ জুন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশে উৎপাদনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দেশে সরকারিভাবে করোনার টিকা উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) গোপালগঞ্জের কারখানাটির সক্ষমতাকে বিশেষ বিবেচনায় রাখছে কমিটি। ইডিসিএল সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। টিকা উৎপাদন বিষয়ে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘দেশে করোনার টিকা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকটি সভাও করেছি। সেখানে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তাদের প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করতে বলেছি। গোপালগঞ্জে যে ওষুধ কারখানা আছে, সেখানে বা তার পাশে আমরা টিকা তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এর জন্য একটু সময় লাগবে। তবে এখনই কাজ শুরু হয়ে গেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর