সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সবাই একটু সাবধানে থাকবেন, আমার বিশেষ অনুরোধ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাই একটু সাবধানে থাকবেন, আমার বিশেষ অনুরোধ : প্রধানমন্ত্রী

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশবাসীকে সতর্ক ও সাবধানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যেহেতু করোনায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপক হারে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেছে, কাজেই সবাই একটু সাবধানে থাকবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কৃষককে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়।

গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ দেন। এ ছাড়া পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে বক্তৃতা করেন মায়া রানী বাউল। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার-১৪২৪’ প্রদান করেন। এ পুরস্কারে রয়েছে ৫টি স্বর্ণপদক, ৯টি রৌপ্য পদক এবং ১৮টি ব্রঞ্জ পদক। কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩২ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে এই পদক বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কার্যাবলি সম্পর্কিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয় এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘বাণী চিরসবুজ’ ও স্মারকগ্রন্থ ‘চিরঞ্জীব’ নামে দুটি স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। করোনা মোকাবিলায় দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অবস্থা (করোনা) আমরা মোকাবিলা করতে পারব। সে বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা আমরা চাই। এখন নিজেকে নিরাপদ রাখবেন, নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখবেন, স্বাস্থ্য বিধিমালাগুলো মেনে চলবেন। এটা আমার বিশেষ অনুরোধ। 

আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই কৃষিপণ্য বা খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে। কেননা এই করোনাকালে আমরা যদি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে নিজেদের চাহিদা যেমন মেটাতে পারব, তেমনি অন্যকেও সহযোগিতা করতে পারব। আর রপ্তানির ক্ষেত্রেও আমাদের পণ্য বৃদ্ধি করতে পারব। তিনি বলেন, ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ-সবকিছুই আমরা উৎপাদন বাড়িয়ে এটাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে সেগুলো আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। কাজেই প্রক্রিয়াজাতকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যা নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা এক একে সব করে যাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ, আমরা তা করে যাব এবং এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের প্রথম মেয়াদে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সংসদে যখন আমরা ঘোষণা দিই যে, আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিএনপির পক্ষ থেকে তখন প্রতিবাদ করা হয়। তারা বলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। বিএনপির কথাই ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, কারণ বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ সারা জীবন বাংলাদেশ অন্যের কাছে হাত পেতে চলবে, ভিক্ষা করে চলবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা কথা বলতেন, যে ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা ভিক্ষুক জাতি হব না। আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, আমরা ফসল ফলাব, নিজের পায়ে দাঁড়াব, নিজের খাবার নিজে জোগাড় করব। আমাদেরও সেই নীতি। কিন্তু ওদের নীতি ছিল একটু ভিন্ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য চাষি ভাইবোনরা যেমন কৃতিত্ব পাওয়ার দাবিদার, তেমনি আমাদের কৃষি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মীরাও সমান কৃতিত্বের অধিকারী। পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, মুজিববর্ষে যারা পুরস্কৃত হলেন, এভাবে বারবার যেন আপনারা আরও পুরস্কার পান, আরও অধিক সংখ্যক লোক যেন পুরস্কার পায়। এটা যেন অব্যাহত থাকে। আপনারা দেখেছেন কোনো কাজকেই আমরা ছোট করে দেখি না। যখন ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। আমি যখন আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেদের আহ্বান করলাম, তখন আমার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সব সহযোগী সংগঠন কৃষকের সঙ্গে মাঠে নেমে ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল। কাজেই আমরা মনে করি, এই মানসিকতাটাই আমাদের জন্য দরকার। সব কাজ সম্মানজনকভাবে দেখা এবং সেই কাজে সবাই সম্পৃক্ত হওয়া। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে, তবেই আমার দেশের আরও উন্নয়ন হবে, আরও এগিয়ে যেতে পারব বলে মনে করি। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে পথ দেখিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারই সেই সরকার যে সরকার কৃষককে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়। শুধু তাই না, আমরা বর্গাচাষিদেরও বঞ্চিত করিনি। বিনা জামানতে বর্গাচাষিদের আমরা ঋণ দেওয়া শুরু করি। তার উদ্দেশ্যটা ছিল তারা যেন তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে এবং যাতে সক্ষমতা অর্জন করে।

বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, তাঁর স্বপ্ন ছিল কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবেন। শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটাবেন, গরিবের মুখে হাসি ফোটাবেন। বাংলাদেশ বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল দেশে উন্নীত হবে। ’৭৫-র পর ২১টা বছর আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমরা আমাদের মর্যাদা ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছি। দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে পরপর তিনবার আমাদেরকে নির্বাচিত করায়, একটা দীর্ঘ সময় পাওয়ায় আমাদের গবেষণায় যেমন সাফল্য হয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি এবং সেই সঙ্গে দেশকে অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, প্রত্যেক গ্রামে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, রাস্তাঘাট উন্নত করে দিচ্ছি। জাতির পিতা যা নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা একে একে সব করে যাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ আমরা করে যাব। এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর