মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মগবাজারে কেন এই বিস্ফোরণ

জিন্নাতুন নূর

রাজধানীর মগবাজারের ওয়্যারলেস এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সেখানে কোনো ত্রুটিপূর্ণ গ্যাসলাইন পায়নি। আবার বাড়িটির সামনে বিদ্যুতের যে লাইন ছিল তাও অক্ষত ছিল। তবে সংশ্লিষ্টরা সেখানে বায়োগ্যাসের গন্ধ পেয়েছেন। আর বিস্ফোরক অধিদফতরের একটি দল দুর্ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পেয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, এই দুর্ঘটনার জন্য হাইড্রোকার্বন দায়ী হতে পারে। মগবাজারের দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল সকাল থেকেই এ কমিটি কাজ শুরু করেছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন রবিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস বা এ-জাতীয় কোনো কিছুর মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সম্ভবত শর্মা হাউসে জমে থাকা গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণের সূত্রপাত। তবে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম  ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, বিস্ফোরনের ঘটনাটি কোনো নাশকতা নয়। কারণ সেখানে বোমা বিস্ফোরিত হলে বোমার স্পিøন্টারের আঘাতে বাসসহ আশপাশের লোকজন ক্ষতবিক্ষত হতো। এ ঘটনার তদন্তে বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটি করা হবে বলে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা সেখানে কোনো ত্রুটিপূর্ণ গ্যাসলাইন পাইনি। তবে সেখানে বায়োগ্যাসের গন্ধ পেয়েছি। ভবনটির নিচে থাকা স্যুয়ারেজ লাইন থেকে এটি উৎপন্ন হতে পারে। আর বায়োগ্যাস হচ্ছে ৭০ শতাংশই মিথেন গ্যাস। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ধারণা করছি।’ এই বিস্ফোরনের ঘটনায় ভবনটির শর্মা হাউসে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পেয়েছে বিস্ফোরক অধিদফতর কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে বিস্ফোরক অধিদফতরের একটি দল পরীক্ষা করে হাইড্রোবকার্বনের উপস্থিতি পেয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন অধিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের মূল কারণ জানতে আমরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদনটি সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা।’ তিনি বলেন, এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঠিক কী কারণে এমন বিস্ফোরণ হয়েছে তা বের করা সময়সাপেক্ষ। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, প্রাকৃতিক গ্যাসলাইন থেকে দুর্ঘটনা, নাকি এসি বিস্ফোরণ হয়েছে এর কোনো আলামত সরাসরি বের করতে পারিনি। আমরা ডিটেকশন যন্ত্র দিয়ে ঘটনাস্থলে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে এ দুর্ঘটনার কারণ হাইড্রোকার্বন হতে পারে বলে ধারণা করছি।’

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের লোকজন দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছেন, বাড়িটির সামনে বিদ্যুতের যে লাইন তা অক্ষত ছিল। আর ভবনটির কাছে কোনো ট্রান্সফরমার ছিল না। ফলে এটি বিস্ফোরিত হওয়ারও কোনো কারণ নেই।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডা. ইজাজ হোসেইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিলিন্ডারে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়  জেরেনিকভাবে সেটিই হাইড্রোকার্বন। এতে রাসায়নিক হিসেবে বিউটেন আর প্রপেন ব্যবহার করা হয়। এ গ্যাস একটু ভারী। তবে যদি হাইড্রোকার্বন থেকে বিস্ফোরণ হয় আর তা পুড়ে যায় তাহলে সে ভবনে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পাওয়া কিছুটা সন্দেহজনক। এ বিস্ফোরণের জন্য অনেক গ্যাসের প্রয়োজন। আবার খুব বেশি গ্যাস লিক হলে সেখানে অক্সিজেন না থাকলে বিস্ফোরণ ঘটবে না। তবে এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলোতে যে ধরনের বিস্ফোরণ হয় তার সঙ্গে মগবাজারের বিস্ফোরণের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর