বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হলো আরেক লাশ

মগবাজারে বিস্ফোরণে অবহেলার অভিযোগে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আঁখি নীড় ভবনের নিখোঁজ কেয়ারটেকার হারুন-অর-রশিদ হাওলাদারের (৫৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বেলা সোয়া ৩টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। রবিবার বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন কেয়ারটেকার হারুন। বিস্ফোরণের পর থেকে হারুনের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে, থানায় এবং বিভিন্ন হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছিলেন মেয়ে হেনা বেগম। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান চালালে তিন দিন পর গতকাল ধ্বংসস্তূপের নিচে হারুনের লাশ মেলে। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকেই সেখানে উদ্ধারকর্মীরা নিয়মিত মনিটরিং ও অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজও (গতকাল) উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। সেখানে সিঁড়ির কাছে চিলেকোঠার ডেব্রিজ যেখানে, এর নিচে চাপা পড়া অবস্থায় হারুনের লাশ পাওয়া যায়। পরে নিহতের মেয়ে হেনা বেগম তার বাবাকে শনাক্ত করেন। লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

নিহত হারুনের মেয়ে হেনা বেগম বলেন, বিস্ফোরণের পর থেকে তার বাবার খোঁজ মিলছিল না। সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও বাবাকে না পেয়ে তিনি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের জানান। আহাজারি করতে করতে হেনা বলেন, ‘আমার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাকে আমরা এভাবে পাব, এটা কল্পনাও করতে পারিনি। আমাদের এখন কী হবে, কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’ হারুনের মেয়েজামাই জুলহাস মিয়া বলেন, গতকাল বিকালে তার শ্বশুরের লাশ উদ্ধারের পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাদের কল করা হয়। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি শনাক্ত করেন।

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের ওয়্যারলেসের ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো একটি তিন তলা ভবনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে আটজন নিহতসহ দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে কেয়ারটেকার হারুন ছাড়া নিহত অন্যরা হলেন- রেডিও ধ্বনির আরজে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), প্রাইভেটকারচালক স্বপন (৩৯), বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন (৩০), ভবনের নিচতলায় থাকা শর্মা হাউসের পাচক ওসমান গনি তুষার (৩৫), জান্নাত বেগম (২৩) এবং তার ৯ মাসের মেয়ে সোবহানা। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ইমরান হোসেন শুভ (২৫), নবী মন্ডল (৩০) ও মো. রাসেল (২০)। এই তিনজনেরই শরীরে ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তারা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অন্য দুজন হলেন আবু কালাম কালু (৩৩) ও জাফর আহমেদ (৬১)। তারাও শঙ্কামুক্ত নন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনজন। এদের মধ্যে ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি শিক্ষক এস এম কামাল হোসেনের (৬২) অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসাধীন অন্য দুজন হলেন হৃদয় (২৮) ও সুভাষ সাহা (৬২)। একজন আবাসিক চিকিৎসক জানান, বেশির ভাগ রোগীর গ্লাসের কাটাসহ হেড ইনজুরি রয়েছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘আমাদের এখানে পাঁচজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনই আইসিইউতে। তাদের ৯০ শতাংশ করে দগ্ধ হয়েছে। তিনজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। বাকি দুজন আছেন জেনারেল ওয়ার্ডে। তাদের দগ্ধের পরিমাণ তেমন নেই। তবে মাল্টিপল ইনজুরি রয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

পাশের ভবন হেলে পড়েছে : মগবাজারে বিস্ফোরণস্থলের পাশের দোতলা ভবনটি হেলে পড়েছে। হেলে পড়া ভবনটিকে বিপজ্জনক ঘোষণা করে ভিতর থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে। পরে ওই ভবনের বাসিন্দারা সরে যান। ভবনটিতে সব ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বিস্ফোরণস্থলের পূর্ব পাশের দোতলা ভবনটি হেলে পড়েছে বলে জানিয়েছে কারিগরি কমিটি। চোখে দেখেও বোঝা যায় ভবনটি একটি বিদ্যুতের পিলারের ওপর হেলে রয়েছে। ভবনটিকে বিপজ্জনক ঘোষণা করে ভিতর থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা ভবনটি ঘিরে ভ্রাম্যমাণ নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিপজ্জনক ব্যানার টাঙানো হয়। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মালিককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হবে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা : বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় ‘অবহেলার’ অভিযোগ এনে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল সকালে রমনা থানার এসআই রেজাউল করিম বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান। এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সোমবার পুলিশ সদর দফতর সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরক অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিস পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর