বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

তাপসের প্ররোচনায় ব্যাংক হিসাব বন্ধ করেছে দুদক : সাঈদ খোকন

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাপসের প্ররোচনায় ব্যাংক হিসাব বন্ধ করেছে দুদক : সাঈদ খোকন

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের করা মামলায় আদালতের আদেশে নিজের এবং পরিবারের আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে দুষলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তার অভিযোগ, মেয়র তাপস নিজের ‘ব্যর্থতা ঢাকতে’ দুদকের মাধ্যমে তাকে ‘হয়রানি’ করছেন।

গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।   

সাঈদ খোকন বলেন, নিজের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতে সীমাহীন বিদ্বেষ ও হয়রানিমূলক আচরণ করছে তাপস। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের এক আদেশ বলে আমার এবং আমার পরিবারের আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এই আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আমার এবং আমার পরিবারের ৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৩ টাকা রক্ষিত রয়েছে। তিনি বলেন, দেশবাসীর অবগতির জন্য জানাতে চাই, দুদক আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সদস্যকে কোনোরূপ নোটিস প্রদান না করে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি আদালতের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দুদকের এই কর্মকান্ড তাপসের প্ররোচনায় সংঘটিত হয়েছে। আমি মনে করি, এহেন কর্মকান্ডে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে। আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি প্রয়োজনে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করা হবে বলে জানান সাঈদ খোকন। একই সঙ্গে দুদক তদন্ত করলে তার এবং তার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। 

সাঈদ খোকন বলেন, বর্তমান করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে আমার এবং আমার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকলে আমার ও আমার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পাওনা বন্ধ হয়ে যাবে। আমার সংসার পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়বে। বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল থেকে শুরু করে সবকিছু আমার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আমি দুদককে অনুরোধ করব, আপনারা আদালতের মাধ্যমে আমার জব্দকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ করে দেবেন, যেটা আমার এবং আমার পরিবারের সাংবিধানিক অধিকার।

তাপসকে কীভাবে ব্যর্থ মেয়র বলছেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই শহরে লাশ দাফন ফ্রি করে দিয়েছিলাম। এখন ঢাকা শহরে দাফন-কাফন করতে ১২/১৪ হাজার টাকা লাগে। আজকে আজিমপুর গোরস্থানে গিয়ে দেখেন লাশ নামানোর আগে টিকিট লাগে। ব্যর্থ নয়, তাহলে কী বলব? এই শহরের মোড়ে মোড়ে মানুষ এখন স্লিপ দিয়ে চাঁদা তোলে। এই শহর থেকে আমি লাখ লাখ ব্যানার-ফেস্টুন ফেলে দিয়েছিলাম। আজ সিটি করপোরেশন তার নিজের নামে ব্যানার-ফেস্টুন লাগায়। তাহলে কী বলব? সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, মেয়র তাপস কতটুকু ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, এই শহরের মানুষ জানে। কত পার্সেন্ট ভোট পেয়েছেন, এই শহরের মানুষ জানে। যাই হোক, ক্ষমতায় আছেন। মানুষের কাজ করেন। ঢাকার মরা লাশটার ওপরও ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছেন এই মেয়র। ঢাকার মরা মানুষের ওপর ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছেন। আপনি কীভাবে ভালোবাসা আশা করেন? আপনার ব্যর্থতার দায় ঢাকার জন্য আর মানুষ পান না? বারবার শুধু আমার ওপরই? কেন? কেন? তিনি বলেন, নগর পরিচালনা করতে পারেন না, আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখ? আরে তোমার বড় হওয়ার পথে সাঈদ খোকন বাধা নাকি? তুমি বড় হও, তাতে আমার কী? আমাকে মেরে বড় হতে হবে নাকি?

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাঈদ খোকন বলেন, দুদক কীভাবে চলছে তা দেশবাসী জানে। তিনি বলেন, দুদকের তদন্ত করতে আমার কিংবা আমার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। দুদক তদন্ত করতেই পারে। কিন্তু কারও প্ররোচনায় কোনো দলাদলিতে দুদক জড়াবে, একজন নাগরিক হিসেবে আমি এটা প্রত্যাশা করি না। একজন নাগরিক হিসেবে আমি কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখতে চাই। এই শহরের যেমন লক্ষ নাগরিক রয়েছে, কোটি নাগরিক রয়েছে, আমিও একজন সাধারণ নাগরিক। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে যে প্রাপ্য অধিকারটুকু রয়েছে, আমি সেই প্রাপ্য অধিকারটুকু ফিরে পেতে চাই।

দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক মেয়র বলেন, আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কী সন্দেহ তা স্পষ্টভাবে বলতে হবে। আরে ভাই, এই শহরে কী হচ্ছে, মানুষ কি জানে না? দেখে না? দুর্নীতি দমন কমিশনে কী হচ্ছে মানুষ কি দেখে না? জানে না? কী দিয়ে কী করতে চান? শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চান? এটা এই শহরের মানুষ কখনই মেনে নেবে না। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে খোকন বলেন, আমার পরিবার এই শহর, এই নগরীর সেবা করে আসছি প্রায় এক শতাব্দী ধরে। প্রায় ৭০ বছরের ওপরে হবে, ঢাকার শেষ সরদার মাজেদ সরদার, তাঁর মেয়ে আমার মা ফাতেমা হানিফের অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে। আমার বৃদ্ধ মাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, আমার আদরের ছোট বোন, স্ত্রীকে হয়রানি করা হচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।  ব্যবসা-বাণিজ্য করলে এই শহরের অন্যতম ধনী হতে পারতেন দাবি করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ১৯৮৭ সালে তৎকালীন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদক হিসেবে রাজনীতি শুরু। এ শহরের মানুষের জন্য দীর্ঘ ৩৩ বছরের রাজনীতি করেছি। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রাজপথে ছিলাম। মামলা খেয়েছি। কিন্তু রাজপথ ছাড়িনি। তবে কি আজকের এই অবস্থা দেখার জন্য? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনারা বিবেচনা করবেন। প্রয়োজনে ‘আন্দোলনের পথ’ বেছে নেওয়ার হুমকি দিয়ে খোকন বলেন, কারও ব্যর্থতা ঢাকার জন্য আরেকজনের মাথায় কালিমা লেপন করে দেবেন? আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। আইনি মোকাবিলা করব, সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাবাসীকে নিয়ে প্রয়োজন হলে আরেকবার সংগ্রাম হবে। তিনি বলেন, ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হানিফের স্ত্রী লাঞ্ছিত হবেন? এটা ঢাকাবাসী মেনে নেবে না।

সর্বশেষ খবর