শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৪৩ জন, শনাক্ত ৮৩০১

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

মহামারীর ১৬তম মাসে এসে মরণকামড় বসিয়েছে করোনাভাইরাস। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের হার। করোনা সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে ১৪৩ জনের, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। একই সঙ্গে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩০১ জন। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন ৮ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ২৫.৯০ শতাংশ, যা ৩৩২ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি ৩১.৯১ শতাংশ শনাক্তের হার ছিল শুধু গত বছরের ৩ আগস্ট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ হাজার ৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৮ হাজার ৩০১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত চার দিনেই দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ১৫৩ জন। গড়ে দৈনিক শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ২৮৮ জন। অথচ, গত মে মাসের ৩১ দিনে শনাক্ত হয় ৪১ হাজার ৪০৮ জন। গড়ে দৈনিক শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৩৬ জন। সেই হিসাবে দৈনিক রোগী শনাক্ত ছয় গুণ বেড়েছে।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯১৩ জন। মারা গেছেন ১৪ হাজার ৬৪৬ জন। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু। অথচ গত বছর সংক্রমণের শুরুর দিকে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশে করোনা বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। ২০২০ সালের কোনো মাসেই শনাক্ত রোগী ১ লাখ ছাড়ায়নি। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ১ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। মে মাসে কমে ৪২ হাজারের নিচে নামে। জুনে আবারও ১ লাখ ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আগের কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায়ও সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এক দিনেই এই বিভাগে মারা গেছেন ৪৬ জন, যা এই মহামারীকালে সর্বোচ্চ। মৃত্যু বেড়েছে ঢাকা বিভাগেও। গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে ৩৫, রাজশাহীতে ১৯, চট্টগ্রামে ১৫, রংপুরে ১০, বরিশালে আট, সিলেটে সাত ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ১৪৩ জনের মধ্যে ৯০ জন পুরুষ ও ৫৩ জন নারী। হাসপাতালে ১৩২ জন ও বাড়িতে ১১ জন মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ৭০ জনই ষাটোর্ধ্ব। ৪২ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ১৮ জন চল্লিশোর্ধ্ব, ১১ জন ত্রিশোর্ধ্ব, একজন ১১ থেকে ২০ বছর বয়সসীমায় ও একজন মারা গেছে ১১ বছরের কম বয়সী। দফায় দফায় বিধিনিষেধের পরও উচ্চ সংক্রমণ হার বজায় রয়েছে খুলনা ও রংপুর বিভাগে। দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ওঠানামা করছে সংক্রমণ হার। নমুনা পরীক্ষায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল রংপুর বিভাগে ৪০.৭৯ শতাংশ। খুলনায় ৩৭.৬৪ শতাংশ, সিলেটে ২৯.১০ শতাংশ, বরিশালে ২৮.৪০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৪.৪২ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৪ শতাংশ ও ঢাকা বিভাগে ২২.৮৫ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার। নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি সংক্রমণ বাড়ায় শনাক্ত রোগী বাড়ছে। এতে চরম চিকিৎসা সংকট দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলা ছাড়াও অনেক জেলায়ও নেই আইসিইউ। নেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা। অক্সিজেনের অভাবে নমুনা পরীক্ষার আগে করোনা উপসর্গ নিয়েই মারা যাচ্ছে অনেকে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর-

সাতক্ষীরায় অক্সিজেন সংকটে ১৪ মৃত্যু : সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে শ্বাসকষ্টে নয়জনের মৃত্যু ঘটে। এক দিনে এটিই সাতক্ষীরায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। রামেকে ২২ মৃত্যু : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। ১৬ জন ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। একজন করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর মারা যান। শেরেবাংলায় সাত মৃত্যু : বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় একজন পজিটিভসহ সাতজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন রোগী। করোনা ওয়ার্ডে গতকাল দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৪৮ জন রোগী। ঝিনাইদহে ১০ মৃত্যু : ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেটে সাত মৃত্যু : সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাতজন। এদের সবাই সিলেট জেলার বাসিন্দা। কালিয়াকৈরে দুই মৃত্যু : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় দুজন করোনা রোগী মারা গেছেন। টাঙ্গাইলে সাত মৃত্যু : টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতজন মারা গেছেন। এ ছাড়া এ দিন করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও নয়জন মারা গেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর