রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

যত টাকাই লাগুক টিকার ব্যবস্থা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রবাসীদের অগ্রাধিকার। টিকা দিয়ে স্কুল খুলে দেব জিয়াউর রহমান দেশে ‘কারফিউ গণতন্ত্র’ দিয়েছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

যত টাকাই লাগুক টিকার ব্যবস্থা হবে : প্রধানমন্ত্রী

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যত টাকাই লাগুক দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা করা হবে। বৈশ্বিক বাজারে চড়া দামে কিনলেও দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেবে সরকার।

গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

টিকা প্রয়োগ শেষ হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথাও জানান সরকারপ্রধান। করোনার কারণে সীমিত পরিসরে ১২ কার্যদিবসেই শেষ হয় নতুন বছরের বাজেট পাসের আনুষ্ঠানিকতা। রীতি অনুযায়ী গতকাল দুপুরে অধিবেশনের সমাপনী দিনে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার মধ্যেও নতুন বাজেট অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা পুনরুজ্জীবিত করবে। যেহেতু আবার করোনা দেখা দিয়েছে সেহেতু সাধ্যমতো আবার সহযোগিতা দেব। কারও খাদ্য প্রাপ্তিতে যেন সমস্যা না হয় সে বিষয়টা অবশ্যই আমরা দেখব। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে চড়া দামে কিনলেও মানুষের কাছে বিনামূল্যে টিকা পৌঁছাতে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে মডার্না এবং সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে পৌঁছে গেছে। যেখানে যেখানে টিকা পাওয়া যাচ্ছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং আরও টিকা নিয়ে আসব। যত টাকা লাগে আমরা কিনব। এর জন্য বাজেটে আলাদা টাকাই রাখা আছে। আমরা কমপক্ষে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসব। এসব টিকা আমরা অনেক টাকা দিয়ে কিনলেও সবই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

গ্রামে যাওয়ার কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে গত ঈদুল ফিতরে বারবার অনুরোধ করলাম আপনারা আপনাদের জায়গা ছেড়ে যাবেন না, কিন্তু অনেকেই সে কথা শোনেননি, সবাই ছুটে চলে গেছেন। আর তার ফলটা কী হলো? যারা বাইরে ছিল পুরো বর্ডার এলাকায় বিভিন্ন জেলায় এ করোনাটা ছড়িয়ে পড়ল। সবাই যদি আমাদের কথা শুনত তাহলে হয়তো আজকে এমনভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ত না।

প্রবাসীদের টিকায় অগ্রাধিকার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছে তাদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ফাইজারের টিকা যা এসেছে, বিদেশে যেসব শ্রমিক যাচ্ছে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে এ টিকা পাওয়ার। যাতে তাদের সেখানে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে না হয়। তিনি বলেন, গতকাল রাতে এবং আজ খুব ভোরে (শুক্র ও শনিবার) মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে পৌঁছেছে। মডার্না থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন চলে আসছে। সিনোফার্মের ২ মিলিয়ন এসেছে। সিনোফার্মের টিকা কিন্তু কিনেছি। তার আগে চীন থেকে কিছু উপহার পাঠানো হয়েছে। ভারতও কিছু উপহার দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু সমস্যা হয়েছিল ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করায়। বর্তমানে টিকা এসে গেছে। আমরা চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া- সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে নিয়ে নিচ্ছি। আরও টিকা নিয়ে আসব। যত লাগে টিকা কিনব। তার জন্য বাজেটে আলাদা টাকা রাখা আছে, কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমাদের নিজেদের বিমান পাঠিয়ে চীন থেকে সিনোফার্মের টিকা নিয়ে আসছি। আমেরিকা মডার্নার টিকা পাঠিয়েছে। বাজেটেও প্রচুর টাকা রেখেছি। ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে, আরও ১০ হাজার কোটি টাকা আলাদা রাখা আছে রিজার্ভে। আমাদের সব সময় লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের জনগণের কল্যাণ করা।

টিকা দিয়ে সব স্কুল খুলে দেব : স্কুল খোলার দাবি প্রসঙ্গে বিরোধী দলের উদ্দেশে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখবে। কিন্তু সেই লেখাপড়ার জন্য তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কি না আমাদের বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতা এবং সংসদ সদস্যরা একটু বিবেচনা করবেন। টিকা দিয়ে আমরা সব স্কুল খুলে দেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যায়, তারাই কিন্তু চান না তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে। তবে ইদানীং সবচেয়ে বেশি সোচ্চার যাদের ছেলেমেয়ে পড়ে না তারা। পড়ার মতো ছেলেমেয়ে যাদের নেই, তারাই বেশি কথা বলে। কিন্তু যারা যায় তারা তো চাচ্ছেন না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিলাম খুলব, তখনই এ করোনাভাইরাস এমনভাবে মহামারী আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল আর তার ধাক্কাটা এলো আমাদের দেশেও। তিনি বলেন, হ্যাঁ, স্কুল বন্ধ আছে। বাচ্চারা পড়ালেখা করবে এটা আমরা চাই। স্কুল-কলেজ বন্ধ আছে। কিন্তু পড়ালেখা যাতে বন্ধ না হয় এজন্য এই সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লাস চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা রেডিও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। রেডিওর মাধ্যমে যাচ্ছে, অনলাইনে যাচ্ছে। যে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে পড়ালেখা করছে। আমরা পড়াশোনা চালিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। তাতে আমরা বলব একটু ক্ষতি হচ্ছে।

বিরোধীদলীয় উপনেতাকে উদ্দেশ করে সংসদ নেতা বলেন, বলার জন্য বলবেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এই ছেলেমেয়েগুলোকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কি না? আমাদের অনেক পরিচিতজন বিদেশে পড়ালেখা করে। আমার নাতিরা পড়ালেখা করে। সেখানে অনলাইনে পড়ালেখা চলে। কিছুদিন স্কুল খুলল আবার যখন মহামারী ছড়িয়ে পড়ল তখন আবার বন্ধ। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে একই অবস্থা। এটা সবাইকে মানতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যে শিক্ষকদের টিকা দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী কোন টিকা কোন বয়সে দিতে হয় তা অনুসরণ করতে হয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ইতিমধ্যে আমরা শিশুদের টিকাদান শুরু করেছি।

জিয়াউর রহমান দেশে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিলেন : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ থেকে ’৮১ সাল পর্যন্ত কারফিউ দিয়েছিল বিএনপি। জিয়াউর রহমান দিয়েছিল কারফিউ গণতন্ত্র। নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকত। ’৭৮ সালে হ্যাঁ-না ভোট, ’৭৯ সালে নির্বাচন সবই ছিল খেলা। তিনি বলেন, বিএনপি এমন একটি দল যে দল সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক জান্তা। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যে পরিকল্পনা হয় তার মূল শক্তি ছিল এই জিয়াউর রহমান। খুনি কর্নেল রশীদ এবং ফারুকের বিবিসিকে দেওয়া ইন্টারভিউতে এটি স্পষ্ট রয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের সঙ্গে না থাকলে কোনো দিনও এ ষড়যন্ত্র করতে পারত না। কারণ জিয়াউর রহমান ছিল উপ-সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পর খালেদা জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। কারণ তার আরেকটি ঘটনা আছে সেটা আমি জানি। ওই সময় জিয়াউর রহমান ছিল কুমিল্লায়। তখন তাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং উপ-সেনাপ্রধান করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাকে উপ-সেনাপ্রধান করেন। ওই সময় তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর থেকে মেজর জেনারেল করেন বঙ্গবন্ধু। আর সেই জিয়াই ষড়যন্ত্র করে মোশতাক, কর্নেল রশীদ, ফারুককে নিয়ে। মোশতাক যখন অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে জিয়াউর রহমানকে করে সেনাপ্রধান। সেই মোশতাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। জিয়া ছিল একদিকে সেনাপ্রধান, আরেকদিকে দেশের রাষ্ট্রপতি। এর আগে আইয়ুব খান একই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল। বিএনপি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আবার রাজনীতিবিদ হয়। উর্দি পরে ক্ষমতায় এসে পরে রাজনীতিতে নাম লেখায়। সেখান থেকে পরে রাজনৈতিক দল গঠন করে। সে দলই হলো বিএনপি। বিএনপি মানে- বাংলাদেশ না, পাকিস্তান হ্যাঁ। এই তো বিএনপি। এই হলো তাদের রাজনীতি, এই হলো তাদের গণতন্ত্র। প্রতি রাতে কারফিউ, ১৯৮১ সালে যখন বাংলাদেশে আসি তখনো কারফিউ। ’৭৫ থেকে ’৮১ সাল পর্যন্ত কারফিউ দিয়েছিল বিএনপি। জিয়াউর রহমান দিয়েছিল কারফিউ গণতন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপি এমপির দেওয়া বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য বলেছেন কোরআন শরিফে নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা নেই। আমি বলব অবশ্যই আছে। আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হতে। তিনি এ শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম সব ধর্মের মর্যাদা দেয়। কোরআন শরিফে আছে ‘লাকুম দিনুকুম ওয়াল ইয়াদিন’ অর্থাৎ ‘যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে’। যার যার মতামত সে প্রকাশ করবে। এটা প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাই আসে। যতই তিনি অস্বীকার করুন, যেভাবে তিনি ব্যাখ্যা দেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। যুগ যুগ ধরে এটা চলছে। হ্যাঁ, অবশ্যই নিজের ধর্ম পালনে সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল থাকতে হবে। এটা আমাদের শিক্ষা। এটা নবী করিম (সা.) সব সময় বলে গেছেন। কাজেই এ ধরনের কথা সংসদে না বলাটাই ভালো।

মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ইতিমধ্যে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। শুধু সরকার নয়, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রণোদনা দিয়েছি বিভিন্ন খাতে। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। এমন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ নেই যাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর