রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনে বেড়েছে গাড়ি লোক চলাচল, গ্রেফতার মামলা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

লকডাউনে বেড়েছে গাড়ি লোক চলাচল, গ্রেফতার মামলা জরিমানা

লকডাউনের তৃতীয় দিনে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে চেকপোস্ট। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট -রোহেত রাজীব

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের তৃতীয় দিনে মানুষের চলাচল আগের দুই দিনের তুলনায় বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও কাঁচা বাজারগুলোতে গতকাল মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। অলিগলিতেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ভিড় দেখা গেছে। তবে বিধিনিষেধ মানাতে পথে পথে আগের মতোই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির তল্লাশি পেরিয়েই বাইরে বের হতে হচ্ছে সবাইকে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এক সপ্তাহের ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রথম দুই দিন ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা ছিল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরিয়ে এ দুই দিন অনেকেই শাস্তির মুখে পড়েছেন। গতকালও হয়েছে গ্রেফতার ও জরিমানা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যানুসারে, গতকাল ঢাকায় তৃতীয় দিনে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৬২১ জন। মোবাইল কোর্টে ৩৪৬ জনকে জরিমানা করে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮৫৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গাড়িগুলো থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। র‌্যাব সদর দফতরের তথ্যানুসারে, সারা দেশে ৩১টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২৭৭ জনকে জরিমানা করে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।

গতকাল তৃতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর সব প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। পল্টন,

মালিবাগ, আজিমপুর, মিরপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল এলাকায় রিকশার পাশাপাশি চলেছে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি। জরুরি সেবার পরিবহনসহ পণ্য পরিবহনের গাড়ি চলতে দেখা যায়। কাঁচা বাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সব এলাকাতেই পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে কিছু গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় সেনা সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

ঢাকার মতো সিলেট নগরের রাস্তাঘাটে বেড়েছে মানুষের চলাচল। নানা কাজে ঘর থেকে বের হন মানুষ। আগের দিনের তুলনায় রাস্তায় জনসাধারণ ও রিকশা চলাচল ছিল বেশি। সিলেট মহানগর পুলিশ নগরের ১৬টি মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে। নগরের চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার, জিন্দাবাজার, কোর্ট পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব সদস্যরা যানবাহন আটকে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একই চিত্র ছিল রাজশাহীতেও। সকাল থেকে দৈনন্দিন কাজে মানুষ বের হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চলাচলও বেড়েছে। তবে মানুষকে জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাসহ ৯টি উপজেলায় তিন প্লাটুন বিজিবি ও তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে রাজশাহীজুড়ে টহল দিচ্ছে। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠে ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই পরিস্থিতির খবর পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, রাজবাড়ী, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। আগের দুই দিনের মতো ফেরিগুলো স্বাভাবিক চলাচল করলেও ছিল কড়াকড়ি। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার সবগুলো ফেরিঘাটের প্রবেশপথে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মহাসড়ক এড়িয়ে যারা ফেরিঘাটে আসছেন তাদের আটকে দিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী অংশ এবং রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ী অংশে অপ্রয়োজনে কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। তবে গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা বাইরে এসেছেন তাদের সহযোগিতা করছেন পুলিশ সদস্যরা। মানিকগঞ্জ জেলায় ব্যস্ততম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে যাত্রীর চাপ ছিল না।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের তথ্যানুসারে, দেশের জেলায় জেলায় জরিমানা ও সাজার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দিনাজপুর সদরে বিধিনিষেধ অমান্য করায় গত দুই দিনে ১২৩ জন ব্যক্তিকে ৬ লাখ ৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুর্তজা আল মুঈত। খানসামায় লকডাউনের তৃতীয় দিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৬টি মামলায় ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন স্থানীয় ইউএনও। কাহারোলের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি নির্দেশ অমান্য করে দোকান খোলার দায়ে ১০ জন ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নাটোরে লকডাউনের তৃতীয় দিনে প্রয়োজন ছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণে অর্ধশত মোটরসাইকেল চালকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে ২৫ জনকে ২৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সরকারি আদেশ অমান্য করে দোকানপাট খোলা রাখা, মাস্ক না পরে অবাধে ঘোরাফেরা করা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করায় ৫টি মামলায় ৭ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঁচটি গাড়িকে আটক করা হয়েছে। রেকার বিলের জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ৬টি গাড়িকে মামলা দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে গতকাল আইন অমান্যকারী জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় ৬টি মামলা দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে আদায় করা হয় জরিমানার ৯ হাজার টাকা। বাগেরহাটে কঠোর লকডাউনের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ১৯৬ জনকে লক্ষাধিক টাকা অর্থদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় মামলা হয়েছে ১৮৪টি। ১৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করে। নারায়ণগঞ্জ জেলায় লকডাউনের তৃতীয় দিনে ৬৩টি মামলায় ৪৫ জনকে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় কঠোর লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দোকানপাট খোলা রাখায় দায়ে ৫৯৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫০ টাকা অর্থদন্ড আদায় করেছেন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। নীলফামারীর সৈয়দপুরে ব্যবসায়ীসহ পথচারীদের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জনকে ১৫ দিন করে কারাদন্ড ও ১৮ জনকে অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর