মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড

মারা গেলেন ১৬৪, আক্রান্ত ৯৯৬৪ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড

দিন দিন ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনাভাইরাস। কঠোর লকডাউনের মধ্যেই গতকাল সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৬৪ জন, করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৬৪ জনের। যা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার পৌঁছেছে ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশে। রবিবার শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শনিবার ছিল ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ ছাড়া রবিবার শনাক্ত হয়েছিল ৯ হাজার ৬৬১ জনের; মৃত্যু হয়েছিল ১৫৩ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ২৫০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪২ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগেও হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর যে ১৬৪ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৫৫ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪০ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ৯৬৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১৬৪ জনের প্রাণ গেছে এ ভাইরাসের কারণে। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জনে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৫ হাজার ২২৯ জনের। গত বছর মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর এক দিনে এরচেয়ে বেশি রোগী আর কখনো শনাক্ত হয়নি, এত মৃত্যুও আর কখনো দেখতে হয়নি বাংলাদেশের মানুষকে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর ওপরে থাকছিল প্রতিদিন। এর মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম দিন ১৪৩ জনের রেকর্ড মৃত্যুর খবর আসে। ৪ জুলাই তা ছাপিয়ে ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। পরদিনই গতকাল (৫ জুলাই) দেশে ১৬৪ জনের রেকর্ড মৃত্যু হলো। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জুন সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়। তার আগের দিন ৩০ জুন রেকর্ড ৮ হাজার ৮২২ জন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল। গতকাল তা ছাড়িয়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছাল ১০ হাজারের কাছাকাছি।

নতুন পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়ছিল। গতকাল তা ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের আগস্টের পর সর্বোচ্চ। ওই সময় ৩ আগস্ট শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। তার আগে গত বছরের ১২ জুলাই দৈনিক শনাক্তের হার পৌঁছেছিল ৩৩ দশমিক শতাংশে যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। সরকারি হিসেবে গত এক দিনে আরও ৫ হাজার ১৮৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৮২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

এদিকে বিভাগভিত্তিক শনাক্তের হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের মোট শনাক্তের ৪২ দশমিক ৬৫ শতাংশ রোগী রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৪০ জন। শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২৫০ জন। এই বিভাগে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। এই বিভাগেও সামান্য বাড়ছে করোনার রোগী। ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার ২৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। মারা গেছেন ১৩ জন।

ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ২ জন। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮৯ জন। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৮০ শতাংশ। চট্টগ্রামে মারা গেছেন ১৮ জন। এ বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৭ জন। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। রাজশাহীতে মারা গেছেন ১৬ জন। শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১২৩ জন। শনাক্তের  হার ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। রংপুর বিভাগে মারা গেছেন ১৬ জন। শনাক্তের সংখ্যা ৬৭৬ জন। শনাক্তের হার ৩৪ শতাংশ দশমিক ২২ শতাংশ। খুলনা বিভাগে মারা গেছেন ৫৫ জন। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৭০ জন। শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন ৯ জন। শনাক্তের সংখ্যা ৪৩৬ জন। শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। একই সময়ে সিলেট বিভাগে মারা গেছেন ৮ জন। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৫৩ জন। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- ধারাবাহিক বিধিনিষেধ ও লকডাউনেও খুলনায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। উপরন্তু প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণ আগের দিনের রেকর্ড ভাঙছে। সাতক্ষীরায় করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও কলেজে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই নারীসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

অক্সিজেন সংকটে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চার করোনা রোগী মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। রবিবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টার মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। একজন চিকিৎসক জানান, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পাবনা হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। হাসপাতালে এসেও রোগীদের বাইরে থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাতেও সংকট কাটছে না। ঘাটতির কারণে ঠিকমত অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারায় রোগীরা মারা গেছেন।

রংপুরের করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। তাই নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে রমেক হাসপাতালে একটি নতুন ইউনিট খোলা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে আবারও মৃত্যু বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের মধ্যে তারা মারা যান। রবিবার হাসপাতালটিতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ছয়জন এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও নয়জন মারা যান।

নাটোরে করোনা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের আশা জাগিয়েছে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি চলমান করোনা মহামারীতে নানাবিধ মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অক্সিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সেসব কাজের অন্যতম। বাড়িতে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, এমন রোগীরা দিন কিংবা রাতে শুধু একটি মোবাইল কল দিলেই কোনো প্রকার অর্থ ছাড়াই পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। প্রতিষ্ঠার ১২ দিনে গতকাল পর্যন্ত নাটোরের তিন শতাধিক মানুষ ঘরে বসে অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে কুমিল্লায়। গতকাল ৬৭০ জনের নমুনার ফল আসে। আক্রান্তের হার ৪২.১ শতাংশ। এক দিনে আক্রান্ত ও শনাক্তের হারের দিক থেকে কুমিল্লায় এটাই সর্বোচ্চ।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর