মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

মিক্সড ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই

অনিশ্চয়তায় ১৫ লাখ মানুষ, বয়স ৩৫ হলেই টিকা নিবন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার সংক্রমণ রোধে ‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ’ পদ্ধতিতে টিকা (দুই ডোজ দুই ধরনের) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের। দ্বিতীয় ডোজের সংকট সমাধানে আগামী মাসের শুরুর দিকে অন্য দেশ থেকে ১৫ লাখ টিকা আনার চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক পর্যায় এবং পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে মিক্সড ডোজের পরামর্শ না আসায় এ মুহূর্তে মিক্সড ডোজের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। 

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘দেশে শিগগিরই গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। হাতে যে টিকাগুলো রয়েছে সেগুলো সঠিক বণ্টন করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দ্বিতীয় ডোজ যারা পাননি তাদের মডার্না বা সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই ডোজ দুই ধরনের টিকা দেওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত আমরা পাইনি। তাই এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে অক্সফোর্ডের টিকার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি এ মাসেই কিছু টিকা আমরা পাব। যা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অবশিষ্ট টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।’

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা দেওয়ার পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণার ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। এমনকি সরকারের টিকা বিষয়ক ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট গ্রুপ (নাইটেগ)ও এমন কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। তাই যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি              মাসের শেষ নাগাদ অথবা আগামী মাসের শুরুর দিকে ১৫ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে আসার তথ্য রয়েছে। জাপান থেকে এ টিকা আনার প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত আলোচনা সম্পন্ন হবে এবং দেশে টিকা আসবে। প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাননি, তাদের এ টিকা দেওয়া হবে। যত দ্রুত আসবে তত দ্রুত শুরু করা হবে টিকাদান। অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯১ হাজার ৭০৭ জন। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ নিতে বাকি আছেন ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৩০৮ জন। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তিকৃত টিকা না দেওয়ায় তৈরি হয়েছে এ সংকট। ভারতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেশটি। এখনো চালু হয়নি টিকা রপ্তানি। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে অন্য টিকা দেওয়া যাবে কি না এমন তথ্য পৃথিবীর কোথাও নেই। কারণ অন্য কোনো দেশে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবে অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে কানাডায় ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত নির্দেশনা ছিল। ভারতে দুই ডোজের মধ্যবর্তী সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ সপ্তাহ। যারা এ টিকা আবিষ্কার করেছে অর্থাৎ ব্রিটেন দুই ডোজের মধ্যবর্তী সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে ১২ সপ্তাহ। অধ্যাপক সায়েদুর বলেন, টিকার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সীমিত আকারে কিছু প্রাথমিক তথ্য এসেছে। আগামী এক মাস পরে হয়তো আরও তথ্য আসবে।

বয়স ৩৫ হলেই মিলছে টিকা নিবন্ধনের সুযোগ : করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধনের ন্যূনতম বয়সসীমা কমিয়ে ৩৫ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেছেন, নিবন্ধন চালু করে দিয়ে সারা দেশে আবারও গণটিকাদান কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, তিন-চার দিনের মধ্যেই আবার নিবন্ধন শুরু হবে। টিকার জন্য নিবন্ধনের বয়সসীমা ৪০ বছর পর্যন্ত ছিল। এটা ৩৫ বছর পর্যন্ত নামিয়ে আনার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে যারা নিবন্ধন করেছেন তারা আগে টিকা পাবেন। এভাবেই আমরা ঠিক করেছি।’ এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে থাকা কয়েকটি পেশার কর্মীদেরও টিকা পাওয়ার তালিকায় রাখা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য আইসিটি বিভাগকে বলা হয়েছে। তারা বলেছেন তাড়াতাড়ি সময়ের মধ্যে এটা করে দেবেন। আমরা আশা করছি আমাদের গণটিকাদান কার্যক্রম খুব দ্রুতই শুরু করব। কিছু কিছু নিবন্ধন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখের মতো নিবন্ধন করে দিয়েছি, তারা এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এ পর্যন্ত ৭২ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৯ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। আগামী ৮ জুলাই থেকে অনলাইনে সুরক্ষা প্ল্যাটফরমে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আগ্রহীদের জন্য ফের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

প্রবাসীকর্মীদের টিকার জন্য বিশেষ রেজিস্ট্রেশন উদ্বোধন : প্রবাসীকর্মীদের করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বিশেষ রেজিস্ট্রেশন চালু হয়েছে। গতকাল  প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে সুরক্ষা ও প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে এ বিশেষ রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে সৌদি আরব ও কুয়েতের প্রবাসীকর্মীরা বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে খুব সহজেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট সাতটি কেন্দ্রে গিয়ে ফাইজারের টিকা নিতে পারবেন। পরে অন্যান্য দেশের প্রবাসীকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রবাসীকর্মীদের সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা তৎপর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। টিকা প্রদান নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সে সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রবাসগামী যাত্রীদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিএমইটিতে (প্রবাসী অ্যাপ) প্রি-রেজিস্ট্রেশন করে তারপর সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম করা হয়েছে। বিএমইটির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করলে দ্রুত টিকা নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ফাইজারের টিকা ঢাকার বাইরে সংরক্ষণাগার না থাকায় ঢাকায় সাতটি কেন্দ্রে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন আইনজীবীরা : করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করতে সার্কুলার জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত সব আইনজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ মহামারিতে আইন পেশায় নিয়োজিত আইনজীবীরা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে আইনসেবা ও পরামর্শ কার্যক্রম চালু রেখেছেন। নিরবচ্ছিন্ন আইনসেবা কার্যক্রম চালু রাখতে সব আইনজীবীকে টিকাদানের আওতায় আনা আবশ্যক। যেসব আইনজীবী এখনো সুরক্ষা সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করেননি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাদানের জন্য তাদের সুরক্ষা সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করা প্রয়োজন। রেজিস্ট্রেশনের আগে তাদের সুরক্ষা সিস্টেমে হোয়াইটলিস্টিং করা আবশ্যক। আইনজীবীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ নামের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠাতেও অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর