বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার

বলিউডসহ সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র অনুরাগীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। বিয়োগান্ত কাহিনির ছবিতে হৃদয়স্পর্শী অভিনয়ের জন্য তাঁকে বলা হয় ‘ট্র্যাজেডি কিং’। গতকাল সকালে মুম্বাইয়ের পিডি  হিন্দুজা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। তাঁর স্ত্রী বলিউডের একসময়কার সাড়াজাগানো অভিনেত্রী সায়রা বানু। দিলীপ ও সায়রা বানু দম্পতির সন্তান নেই। হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট ডা. জলিল পারকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন দিলীপ কুমার। বরেণ্য এ অভিনেতার ভেরিফায়েড টুইটার পেজে গতকাল (বুধবার) সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। দিলীপ কুমার দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। ৩০ জুন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। ট্র্যাজেডি কিংয়ের মৃত্যুতে বলিউডসহ তাবৎ দুনিয়ার সিনেমাপুরীতে নেমে আসে শোকের ছায়া।

দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

ছয় দশকের ক্যারিয়ারে দিলীপ কুমার ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জোয়ার ভাটা, আন, আজাদ, দেবদাস, আন্দাজ, দিদার, মুঘল-ই-আজম, গঙ্গা যমুনা, রাম আওর শ্যাম, দিল দিয়া দর্দ লিয়া, ক্রান্তি, কর্মা, শক্তি, সওদাগর, মশাল, সাগিনা মাহাতো। আটবার তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জয় করেছেন। হিন্দি সিনেমাজগতের সবচেয়ে বড় সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে‘ পুরস্কারেও তাঁকে সম্মানিত করা হয়। ২০১৫ সালে ভারত সরকার দিলীপ কুমারকে সে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসামরিক খেতাব ‘পদ্মবিভূষণ’-এ সম্মানিত করে।

দিলীপ কুমারের প্রকৃত নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। তাঁর জন্ম পেশোয়ার শহরের (বর্তমানে পাকিস্তান) কিসমাখানি বাজারে। তাঁর বাবা মোহাম্মদ সারোয়ার খান ছিলেন একজন ফল ব্যবসায়ী। কৈশোরে বাবার সঙ্গে তিনি মুম্বাই নগরীতে আসেন। একসময় মুম্বাই থেকে পুণে গিয়ে ব্রিটিশ সেনাদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান। এর কিছুদিন পর আবারও মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) ফিরে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন। ব্যবসার কাজেই একসময় ইউসুফ খানের পরিচয় হয় সে সময়কার প্রখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে। তিনি ইউসুফকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বোম্বে টকিজ’-এর মালিকের সঙ্গে। ১৯৪৩ সালে ইউসুফ খান বোম্বে টকিজে যান চাকরির জন্য। কিন্তু সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাঁকে অভিনেতা হওয়ার প্রস্তাব দেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর তাঁর নাম ইউসুফ খানের পরিবর্তে রাখা হয় দিলীপ কুমার। সেই ১৯৪৪ সালে প্রথম চলচ্চিত্র ‘জোয়ার ভাটা’ থেকেই ইউসুফ খানের দিলীপ কুমার হয়ে ওঠা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র তথা গোটা উপমহাদেশের কিংবদন্তি হিসেবেই সমুজ্জ্বল ছিলেন তিনি।

প্রথম দিকে দিলীপ কুমারের কয়েকটি ছবি ব্যবসাসফল হয়নি। ১৯৬০ সালে কে আসিক পরিচালিত ‘মুঘল-ই-আজম’ ছবিতে শাহজাদা সেলিমের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় দিলীপ কুমারকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যায়; এ ছবির আর্থিক সাফল্য ভারতের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর