শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

শনাক্তের নতুন রেকর্ড

নতুন শনাক্ত ১১ হাজার ৬৫১ জন, ১৯৯ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনাক্তের নতুন রেকর্ড

সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরের দিন করোনা রোগী শনাক্তে নতুন রেকর্ড হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৬৫১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ১৯৯ জনের। গত বুধবার মৃত্যু হয়েছিল ২০১ জনের। তার আগের দিন মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। সেদিন ১১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। গতকাল সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেল।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ জনে। তাদের মধ্যে ১৫ হাজার ৭৯২ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে। গত এক দিনে আরও ৫ হাজার ৮৪৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬ জন।

গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ৯৪৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪২ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে এক দিনে শনাক্ত রোগী প্রায় ২ হাজারে পৌঁছেছে, খুলনায় ছাড়িয়েছে দেড় হাজার। আর যে ১৯৯ জন গত এক দিনে মারা গেছেন তাদের ৬৫ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৫টি ল্যাবে ৩৬ হাজার ৮৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৮২টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ, আগের দিন যা ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ৪৫৬ জন, ফরিদপুরে ১৬৪ জন, গাজীপুরে ২০০ জন, গোপালগঞ্জে ১২৬ জন, কিশোরগঞ্জে ১২৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০৩ জন, রাজবাড়ীতে ১৪৩ এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২৫৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৭১৩ জন, কুমিল্লায় ৩৯৩ জন, নোয়াখালীতে ১৬৮ জন, কক্সবাজারে ২১২ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৮০ জন, নাটোরে ১৫২ জন, পাবনায় ১৭৭ জন, সিরাজগঞ্জে ১১৬ জন এবং বগুড়ায় ২৩৮ জন নতুন রোগী মিলেছে। খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে ১৩৫ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৯১ জন, যশোরে ৩৫২ জন, ঝিনাইদহে ১৪৪ জন, খুলনায় ৩৩৮ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২৩২ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ। রংপুর বিভাগের রংপুরে ১১৬ জন, দিনাজপুরে ১১১ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ ছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৫৬ জন, বরিশাল জেলায় ১২৫ জন এবং ময়মনসিংহ জেলায় ২৩৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।

গত এক দিনে বিভাগে যে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৮ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ১২ জন করে খুলনা ও কুষ্টিয়া বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

মৃত ১৯৯ জনের মধ্যে ১০৭ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৭ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২১ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ১৩৩ জন ছিলেন পুরুষ, ৬৬ জন নারী। ১৪৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪২ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১২ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী-

চট্টগ্রামে এক দিনেই সর্বোচ্চ ৭১৩ জন নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ৯ জন। গত বুধবার ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২ হাজার ১০৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয় ৭১৩ জন। বর্তমানে চট্টগ্রামে সংক্রমণের হার ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার প্রায় প্রতিটিতেই বেড়েছে সংক্রমণ। সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে হাটহাজারী উপজেলায়, ৫৮ জন। এ ছাড়া সীতাকুন্ড উপজেলায় ৩৩ জন, ফটিকছড়ি উপজেলায় ২০ জন ও রাউজান উপজেলায় ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

খুলনা নগরীর সরকারি-বেসরকারি চারটি হাসপাতালে গত দুই দিনে করোনায় চিকিৎসাধীন ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সামনে লাশবাহী সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। একই সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে খুলনা বিভাগে সংক্রমণ ও মৃত্যু তালিকা। জানা যায়, খুলনা জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪২৮ জন। বাকি সাড়ে ৪ হাজার রোগী বাসাবাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে মুমূর্ষু রোগী থাকলেও শয্যা খালি না থাকায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। ফলে চিকিৎসাসেবা না পেয়েই মারা যাচ্ছেন অনেকে। আবার মুমূর্ষু রোগী নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটতে ছুটতেও অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।

বগুড়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোগীদের মৃত্যুর ও আক্রান্ত সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি জুলাই মাসে প্রতিদিনই মৃত্যু পাওয়া গেছে। কোনোভাবেই থামছে না মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা আক্রান্ত হয়ে নমুনা সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে হচ্ছে ভোগান্তি।

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল ২১৭ জন রোগী। এদিকে মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে শনাক্তের হার কিছুটা কমে ৫১.৮৫ ভাগে নেমেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গেল ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের মধ্যে তারা মারা যান। এর আগে বুধবার ২০ জন, মঙ্গলবার ১৯ জন, সোমবার হাসপাতালটিতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সাতক্ষীরায় করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাতক্ষীরায় করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা গেছেন ১৭ জন। এদের মধ্যে পাঁচজন করোনা শনাক্ত হয়ে এবং ১২ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর