শিরোনাম
শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ফেসবুকে অবমাননাকর মন্তব্য করা জঘন্য অপরাধ : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করা ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, এ রকম পোস্টের মাধ্যমে ভুক্তভোগী সামাজিক ও মানসিকভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। গতকাল ডিজিটাল নিরাপত্ত আইনের একটি মামলায় দুই আসামির জামিন আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকা সম্পর্কে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার দায়ে করা ওই মামলায় বরগুনার এক দম্পতিকে জামিন দিয়েছে আদালত। জামিন প্রাপ্তরা হলেন- গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান ও তার স্ত্রী তামান্না বেগম। নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়া পর্যন্ত তাদের এই জামিন দেওয়া হয়েছে। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সগির হোসেন লিওন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে তুষার রায় সাংবাদিকদের বলেন, আবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। শুধু মানবিক কারণে আদালত এই জামিন মঞ্জুর করেছে। আক্তারুজ্জামান ও তামান্নার আইনজীবী লিওন বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় তাদের মুক্তিতে বাধা নেই। শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, এক নম্বর আসামি অনুতপ্ত। ভুল করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ফেলেছেন। জামিন চাচ্ছি। এ সময় আদালত বলে, ফেসবুকে যেটা লিখেছেন সেটা একজন মানুষকে গুলি করে খুন করার চেয়ে বড় অপরাধ। একজন মানুষকে সামাজিকভাবে হেয় করা কি যেনতেন কথা! এ সময় আইনজীবী বলেন, যার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জামিন আবেদনকারীরা। এ সময় আদালত বলে, আপনি এখন এসে বলছেন যে মিথ্যা স্যাটাস দিয়েছেন। এখন ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইলে হবে? আপনি তো সারা দুনিয়ার মানুষের সামনে তাদের হেয় করলেন। আপনি যার সম্পর্কে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার সন্তানের সামনে তারা মুখ দেখাবে কী করে? আদালত বলে, মানুষের সামনে কোনো একজন ব্যক্তিকে রাস্তায় লাথি মারলেন, এরপর গোপনে এসে তার পা ধরে মাফ চাইলে কি হবে? এ ঘটনাও তেমনি। আপনি মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে যেমন তাদের সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে হেয় করেছেন, তেমনি আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানাবেন যে আপনি মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। জানা যায়, মামলার বাদীর স্বামী ও আসামি আক্তারুজ্জামান উভয়েই গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা। দুজনেই বরগুনা সদরের রায়তা শাখায় কর্মরত ছিলেন। আসামি আক্তারুজ্জামান সেখান থেকে বদলি হয়ে এখন আমতলী শাখায় দায়িত্বরত। আক্তারুজ্জামানের সহকর্মীর স্ত্রী (মামলার বাদী) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। উভয় পরিবারের বিরোধের জের ধরে মো. আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী তামান্না বেগম স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গত ১৩ মে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকা বাদী হয়ে আক্তারুজ্জামান ও তার স্ত্রী তামান্না বেগমকে আসামি করে গত ৪ জুন বরগুনা সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এ মামলার পর ওই দিনই পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেফতার করে। সেই থেকে তারা কারাবন্দী। এ অবস্থায় ওই দম্পতি হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন।

সর্বশেষ খবর