সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
ব্রাজিলকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন

সেই মারাকানায় মেসির স্বপ্ন পূরণ

মেজবাহ্-উল-হক

সেই মারাকানায় মেসির স্বপ্ন পূরণ

অবশেষে লিওনেল মেসির হাতে ধরা দিল বহুল কাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক ট্রফি। জাতীয় দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফুটবল ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ে ঢুকে গেলেন তিনি -এএফপি

১ মিনিটের ঘটনা। ক্যামেরা, ফোকাস এবং বিশ্বের কোটি ভক্তের দৃষ্টি সেদিকে। লিওনেল মেসিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন নেইমার। মেসির চোখেও পানি- সেটা আনন্দাশ্রু। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দুই গ্রেট যখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবেগ প্রকাশ করছেন তখন পাশেই চলছে শিরোপা হাতে ডি-মারিয়া, আগুয়েরোদের বাঁধভাঙা সেলিব্রেশন। ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান। ফাইনালে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আকাশী-সাদা জার্সিতে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতলেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি।

একেই বলে নিয়তি। বারবার যে মারাকানায় ফাইনালে হেরে আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল সেই মারাকানাই এবার মেসিদের দুই হাত ভরিয়ে সাফল্য উজাড় করে দিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতে হারিয়ে শিরোপা সেলিব্রেশন করল আর্জেন্টিনা।

আলবেসিলেস্তদের জন্য আবেগময় এক শিরোপা। বার্সেলোনার জার্সিতে জয় করা ট্রফিতে যার শোকেজ ভর্তি, যে ফুটবল জাদুকর একে একে ছয়বার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন সেই মেসি কি না আর্জেন্টিনার জার্সিতে বারবার হতাশ হচ্ছিলেন। ভক্তদের হতাশ করছিলেন। বারবার তীরে এসে তরী ডুবে যাচ্ছিল। অবশেষে আকাশী-সাদা জার্সিতে স্বপ্ন পূরণ হলো ফুটবল জাদুকরের।

১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনা যখন বিশ্বকাপ জিতে আর্জেন্টিনাকে আনন্দে ভাসিয়েছেন তখনো জন্ম হয়নি লিওনেল মেসির। আকাশি-সাদা জার্সির সৈনিকরা যখন সবশেষ ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয় তখন মেসি ছয় বছরের বালক। তখন বাতিস্তোতারা কীভাবে সেলিব্রেশন করেছেন হয়তো মনেই নেই। এরপর থেকে কেবল দীর্ঘশ্বাস। শিরোপা যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার জন্য। ‘দুঃস্বপ্ন’ আর ‘দীর্ঘশ্বাস’ নিয়ে বড় হওয়া রোজারিওর সেই বালক মেসি এক সময় এসে বিশ্বসেরা ফুটবলার খেতাব জিতলেন। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনাকে একের পর এক শিরোপা এনে দিলেন। এত সাফল্যের পরও যেন মেসির বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধছিল আর্জেন্টিনার জার্সিতে আন্তর্জাতিক কোনো শিরোপা জিততে না পারায়। তবে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বটে, সেটা ২০০৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদক। ফুটবল যাদের ধর্মজ্ঞান সেই আর্জেন্টিনার কি না পদকে মন ভরে! একটি ট্রফির আশায় কেটে যায় ২৮ বছর। এই ২৮ বছরে পাঁচটি ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা, একটি বিশ্বকাপে এবং চারটি কোপায়। চারটি ফাইনালে খেলেছেন মেসিও। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। পুরো টুর্নামেন্টে ক্যারিশমা দেখালেও ফাইনালে গিয়ে ব্রাজিলের এই মারাকানাতে জার্মানির কাছে হার। কিন্তু এবার মারাকানা আর হতাশ করেনি আর্জেন্টিনাকে। সাফল্যের জোয়ারে ভাসিয়ে দিল। অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয়, সেরা খেলোয়াড় হয়ে জিতলেন ‘গোল্ডেন বল’, সর্বোচ্চ গোল করে ‘গোল্ডেন বুট’ও পেলেন মেসি। পুরো টুর্নামেন্টই যেন মেসিময় হয়ে গেল। সতীর্থ অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে লিওনেল মেসি আগেই বলেছিলেন, ‘এবারের ফাইনালটা হবে আমার।’ যদিও মেসিকে ম্লান করে দিয়ে ২১ মিনিটে ডি মারিয়া গোল করে ফাইনালসেরা হয়েছেন। তবে আসল সেরা তো লিওনেল মেসিই। কোপা আমেরিকার এই শিরোপায় একটি প্রশ্নের উত্তর বোধহয় পেয়ে গেল বিশ্ব ফুটবল- দেশের হয়ে ট্রফি না জিতলে নাকি সর্বকালের সেরা হওয়া যায় না! তাহলে কোপা জেতার পর ছয়বারের বিশ্বসেরা ফুটবলার হওয়ার খেতাব জয়ী ফুটবল জাদুকরকে কি সর্বকালের সেরা বলা যায়! পেলে, দিয়েগো ম্যারাডোনা, জিদান, প্লাতিনি, বেকেনবাওয়ার, ববি মুরের মতো ফুটবলারদেরও মেসি ছাপিয়ে গেছেন কি না সেটা হয়তো মহাকাল-ই বলে দেবে! তবে লিওনেল মেসি যে জীবন্ত কিংবদন্তি তা আর্জেন্টিনা কোপার শিরোপা এনে দিয়ে যেন প্রমাণ করে দিলেন, তাই নয় কি!

সর্বশেষ খবর