সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
রূপগঞ্জে আগুন

লাশের জন্য অপেক্ষা

চলছে ডিএনএ টেস্ট, ঢাকা মেডিকেলে স্বজনদের ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

লাশের জন্য অপেক্ষা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ‘সেজান জুস’ কারখানার আগুনে মৃতদের খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে গতকালও ভিড় করেন স্বজনরা। কেউ ন্যাশনাল আইডি কার্ড হাতে, কেউবা নিখোঁজ স্বজনের ছবি নিয়ে মর্গের সামনে কান্নাকাটি করেন। কেউ কেউ টানা তিন দিন ধরেও অপেক্ষা করছেন কখন বুঝিয়ে দেওয়া হবে স্বজনের লাশ। কিন্তু ডিএনএ প্র্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে নিহতদের লাশ শনাক্তে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়া লাশ এতটাই পুড়ে গেছে যে, হাড় ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। তা কাউকে দেখানোর মতোও না। ফলে কর্তৃপক্ষ কাউকেই লাশ দেখায়নি। যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের মা, বাবা কিংবা সন্তানের ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিআইডি বলছে, লাশগুলো ভস্মীভূত হওয়ায় ডিএনএ প্রোফাইল করতে বেগ পেতে হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় শনাক্তেন জন্য ৬৩ দাবিদারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ৪৫টি লাশের দাবিদার ওই ৬৩ জন। গতকাল সেজান জুস কারখানার আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ পাঁচজনের দাবি নিয়ে আসে তাদের স্বজনরা। নিখোঁজ পাঁচজন হলেন- হাসনাইন (১২), শামীম (১৮), নোমান (১৮), আমেনা (২২) ও খাদেজা (১৬)। এদের শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সাত স্বজনের নমুনা নিয়েছে সিআইডি। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ অ্যানালিস্ট দীপংকর দত্ত বলেন, শুক্রবার বিকাল থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার ১৯ লাশ শনাক্তে ২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া শনিবার ২১ লাশ শনাক্তে ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচজনের লাশ শনাক্তে সাতজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সব মিলিয়ে তিন দিনে ৪৫ লাশ শনাক্তে ৬৩ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা যদি লাশ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করতে পারতাম তাহলে ডিএনএ প্রোফাইল তাড়াতাড়ি করা যেত। কিন্তু আগুনে পুড়ে যাওয়ায় টিস্যু সংগ্রহ করা যায়নি। ফলে হাড় সংগ্রহ করে সেখান থেকে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করতে হচ্ছে। যার ফলে সময় বেশি লাগবে। আমরা দ্রুত চেষ্টা করছি প্রোফাইলিং করে লাশ শনাক্ত করার। তাছাড়া হাড় থেকে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরিতে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হয়।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার জানান, লাশগুলো খুব বেশি পুড়ে যাওয়ায় শুধু হাড় ও দাঁতের নমুনা নিতে পেরেছি।

জ্ঞান ফিরেছে হালিমার : সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগার পর দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত শিশু হালিমা আক্তার গতকাল তার মা-বাবাসহ স্বজনদের চিনতে পেরেছে। ১৩ বছর বয়সী এই শিশু শ্রমিককে গত বৃহস্পতিবার ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। মাথায় আঘাত পেয়ে প্রায় অজ্ঞান ছিল হালিমা। তিন দিন পর গতকাল জ্ঞান ফিরলে মা-বাবাসহ স্বজনকে চিনতে ও তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

হালিমার মা সাহানা আক্তার বলেন, ওই কারখানার দ্বিতীয় তলায় কাজ করত হালিমা। আগুন লাগার পর দোতলা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে মাথায় ও মুখে আঘাত পেয়েছে হালিমা। দুর্ঘটনার পর থেকে মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তিন দিন পর মেয়ে কথা বলছে এবং আমাদের চিনতে পারছে। হালিমার বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানার পালগাঁও। হালিমার বড় বোন সাদিয়াও ওই কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু তার ডিউটি বৃহস্পতিবার রাতে থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।

সেজান জুস কারখানায় আগুনের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেলে আমেনা বেগম (৩৫) ও মাজেদা বেগম (২৮) নামে আরও দুজন ভর্তি রয়েছেন। আগুন লাগার পর দোতলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে কোমরে ও হাতে ব্যথা পান আমেনা। আর একই তলা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে মাথায়, হাতে ও মুখে আঘাত পান মাজেদা।

ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জের আগুনের ঘটনায় তিনজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা উন্নতির দিকে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে ৫১ শ্রমিকের প্রাণহানি ও আহত হয়েছেন অনেকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর