মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কমছেই না মৃত্যুর হার

এক দিনে গেল ২২০ প্রাণ, শনাক্তের রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমছেই না মৃত্যুর হার

দেশে করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড প্রায় প্রতিদিনই ভাঙছে। মহামারী শুরুর পর এক দিনে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। সেই সঙ্গে গত এক দিনে ২২০ জনের প্রাণ গেছে করোনা সংক্রমণে। আগের দিন মারা যান ২৩০ জন। এ নিয়ে গত সাত দিনের মধ্যে চার দিনই ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু দেখল দেশ। জুলাই মাসের ১২ দিনেই মারা গেছেন ২ হাজার ১৩৬ জন। অথচ, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মোট মারা যান ১ হাজার ৪৮৭ জন।

দেশে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আগে করোনা সংক্রমিত হলেও অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে করোনা সংক্রমিত হলে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে রোগীদের। অক্সিজেন ও আইসিইউ চাহিদাসম্পন্ন রোগী হু হু করে বাড়ছে। আইসিইউর জন্য সারা দেশে হাহাকার পড়ে গেছে। এতে দ্রুত লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

এদিকে দেশে অনেক মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে তা ফুটে উঠছে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হারে। নমুনা পরীক্ষা বাড়ালে অনেক কম উপসর্গ বা সাধারণ ফ্লু রোগীও পরীক্ষার আওতায় চলে আসে। তখন শনাক্তের হারও কমে যায়। তবে গত মাসের একই সময়ের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হলেও শনাক্তের হার না কমে উল্টো বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্তের হার ছিল ৩১.২৪ শতাংশ। গত মাসের একই দিনে নমুনা পরীক্ষা হয় ১১ হাজার ৫৯০টি। শনাক্তের হার ছিল মাত্র ১৪.১২ শতাংশ। নমুনা পরীক্ষা প্রায় চার গুণ বাড়ানোর পরও শনাক্তের হার না কমে উল্টো দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

রোগী বাড়ার পাশাপাশি কমে গেছে সুস্থতার হার। ফলে নতুন রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ২০ জন, যা শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীর প্রায় অর্ধেক। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৬ হাজার ৬৩৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২১ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২২০ জনের মধ্যে ১৪২ জন ছিলেন পুরুষ ও ৭৮ জন নারী। হাসপাতালে ২০৭ জন ও বাড়িতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া ৫৫ জন খুলনা, ৩৭ জন চট্টগ্রাম, ২৩ জন রাজশাহী, ১৮ জন রংপুর, ১৩ জন ময়মনসিংহ, ছয়জন সিলেট ও চারজন বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১২১ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ৪৬ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ২৬ জন চল্লিশোর্ধ্ব, ১৭ জন ত্রিশোর্ধ্ব, নয়জন বিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

এদিকে গত মাসে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে করোনাভাইরাস সর্বোচ্চ তান্ডব চালালেও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে এ দুই বিভাগের শনাক্তের হার। অন্যদিকে সীমান্তের সঙ্গে সংযোগ না থাকা ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে তখন সংক্রমণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকলেও এখন টানা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫.৪৫ শতাংশ শনাক্তের হার ছিল বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া সিলেট বিভাগে ৩৭.৩৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪.১১ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২.২২ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩১.৪৩ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৩১.২৬ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ২৯.৬৯ শতাংশ ও রাজশাহী বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ২৪.৪৫ শতাংশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর