শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
উজবেকিস্তানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন সম্পন্ন

পারস্পরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের গুরুত্বারোপ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, উজবেকিস্তান থেকে

উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে ‘মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া : আঞ্চলিক যোগাযোগ, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সহযোগিতা প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তাসখন্দের কংগ্রেস হলে আয়োজিত সম্মেলনের শেষ দিনের অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে এবং বিমসটেক নামক সংস্থার মাধ্যমে শীর্ষ ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে। তিনি জানান, আশিয়ান এবং বিমসটেকের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলো সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন সংযোগ প্রকল্পে নিজেদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে একটি তাৎপর্যময় চুক্তি সই করেছে।

ড. মোমেন বলেন, শিক্ষা, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে মধ্য ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জনগণের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আকাশপথ ও স্থলপথ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসার সুযোগ, দ্বিগুণ কর পরিহার, ভিসা সহায়তা এবং অন্যান্য বাণিজ্য অনুকূল ব্যবস্থা সহজতর ও ত্বরান্বিত করতে দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের নানা কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃঢ় ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া মহামারীকালে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার ও ভ্যাকসিনের সমতায় গুরুত্ব দেন মন্ত্রী। উজবেকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, এখন সারা বিশ্ব একযোগে মহামারী করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। ঠিক এ সময় এরকম একটি সম্মেলন আঞ্চলিক সহযোগিতার দ্বার প্রশস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি সাভকাত মিরজিয়য়েভ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সাইডলাইনে বৈঠক : সম্মেলন চলাকালে গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন অংশগ্রহণকারী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারত, চীন ও তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং উভয় দেশের কভিড পরিস্থিতি ও টিকাদান প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে ড. মোমেন গত বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে বৈঠককালে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে আরও কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হন। তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরোজিদ্দিন মুহরিদ্দিনের সঙ্গে বৈঠককালে ড. মোমেন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে একটি যৌথ কার্যনির্বাহী কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহরিদ্দিন নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের প্রত্যাবাসনে বহুমাত্রিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সর্বশেষ খবর