মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনক্ষণ তো আগেই ঠিক হয়ে গেছে। কোরবানির পশু কেনার পর্বও শেষ করেছেন অনেকে। অনেকে আজও কিনবেন। প্রস্তুতির পালা প্রায় শেষ। আগামীকাল সারা দেশে উদ্্যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। গত বছরের মতো এবারও বৈশ্বিক করোনা মহামারীর প্রভাব থাকছে ঈদে। করোনার প্রভাব ঈদ পালনের অনুষঙ্গগুলোর ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। মহান রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি করে থাকেন বলে এ ঈদকে কোরবানির ঈদও বলা হয়। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও মুবারকবাদ জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। এ বছর এমন একটা সময়ে ঈদুল আজহা উদ্্যাপিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চরমভাবে বিপর্যস্ত। তিনি দেশবাসীর প্রতি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ঈদুল আজহা উদ্্যাপনের আহ্‌বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম, এলডিপির আরেক অংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম পীর চরমোনাই, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত আদায় ও পশু কোরবানির বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। করোনার কারণে এবার রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের কোনো ঈদগাহ ও খোলা মাঠে ঈদ জামাত হবে না। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হবে পাঁচটি ঈদ জামাত। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে হবে শেষ ঈদ জামাত। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার নামাজ হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এবার করোনা সংক্রমণ রোধে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ার ময়দানেও ঈদের জামাত হবে না বলে জানা গেছে।

এদিকে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের উৎসবে শামিল হতে অনেকে ছুটে গেছেন গ্রামের বাড়ি। এ মুহুর্তে কোরবানির পশু কেনার জন্য হাটগুলো ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট। জানা গেছে, পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এ ঈদ। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় বুধবার দিনের শুরুতেই ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইলাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ তকবির বলতে বলতে মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে এবার করোনার মতো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কোরবানির ঈদ হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে পশু কোরবানি কিছুটা কম হতে পারে। জিলহজের ১০ তারিখ ঈদুল আজহা উদ্্যাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয়সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কভিড-১৯) সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৩০ জুন ও ৫ জুলাই কতিপয় বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস (কভিড-১৯)-এর স্থানীয় পরিস্থিতি ও মুসল্লিদের জীবন-ঝুঁকি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে যথোপযুক্ত বিবেচিত হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক ঈদুল আজহার জামাত মসজিদ, ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদ/ঈদগাহে আসতে হবে। ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মসজিদ/ঈদগাহে ওজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদ/ঈদগাহের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে। ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর দাঁড়াতে হবে।’ নির্দেশনায় বলা হয়, ‘শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিতদের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ নিরুৎসাহ করা হলো। সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে। করোনা মহামারীর এ বৈশ্বিক মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং আমাদের কৃত অন্যায়-অপরাধের জন্য ঈদের নামাজ শেষে মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।’ খতিব, ইমাম, মসজিদ/ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর