আগামীকাল থেকে গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী কারখানাকে রবিবার সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখা হলো। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত দেশের রপ্তানি খাতসহ সব উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়ার দাবি জানায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। যা চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। বিধিনিষেধ চলাকালে দেশের সব শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে ঈদের পর থেকেই কারখানা খোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিল্পকারখানার মালিকরা। লকডাউন কী আরও বাড়বে? এমন প্রশ্ন এখন সবার। যদিও আগামী ৫ আগস্টের পর কঠোর বিধিনিষেধ আরও বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম। গতকাল তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধ বাড়ানোর কথা আমরা বলেছি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি বিধিনিষেধ কনটিনিউ করতে। কারণ আমাদের যে কোনোভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সব খুলে দেওয়া যাবে না। সব খুলে দিলে সংক্রমণ আরও বাড়বে। আমরা শুনেছি ব্যবসায়ীরা কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসনে আবেদন করেছেন। কিন্তু সব খুলে দিয়ে সংক্রমণ বেড়ে গেলে তো হাসপাতালে জায়গা হবে না।
বিধিনিষেধে জরিমানা গুনেও রাস্তায় নামছে মানুষ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে বিনা প্রয়োজনে মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হলেই জরিমানা গুনতে হচ্ছে। অনেককে মামলা দিয়ে গ্রেফতারও করা হচ্ছে। তবে চেকপোস্টে জরিমানা দিয়ে ফের সড়কে নামছে মানুষ। গতকাল কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সড়কে অন্য দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে মানুষের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় কম ছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, বিধিনিষেধ প্রতিপালনে জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো যানবাহন সড়কে না চালানোর নির্দশনা থাকলেও অনেকেই ব্যক্তিগত যান নিয়ে বের হচ্ছেন। তাদের মামলা ও জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা ফের সড়কে নামছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুর-১০ নম্বরসহ বিভিন্ন চেকপোস্টে ব্যক্তিগত গাড়ি দেখলেই গতিরোধ করা হচ্ছে। চেকপোস্ট ট্রাফিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জানতে চাচ্ছেন কেন বের হয়েছেন, কোথায় যাবেন? সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের বাসায় পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া মিরপুর-১ নম্বর ও গাবতলী চেকপোস্টে পুলিশের তল্লাশি চোখে পড়েছে। সকাল থেকে মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর, শাহজাহানপুর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। রিকশা ও ভ্যান চলতে দেখা গেলেও যাত্রী তেমন নেই; ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও আগের দিনের চেয়ে অনেক কম। শান্তিনগর বাজারের কাছে মূল রাস্তার পাশে তরকারি, ফলমূল বিক্রি করতে দেখা গেল। সেখানেও ক্রেতা নেই খুব একটা। মিরপুরের কালশি এলাকার রাস্তাঘাটও সকালে অনেকটাই ফাঁকা ছিল। কালশি, মিরপুর ১১ ও ১২ নম্বরের প্রধান সড়ক সংলগ্ন গলিগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষের চলাচল থাকলেও অন্যদিনের মতো ভিড় দেখা যায়নি। বিক্রেতারাও বললেন, ছুটির দিন হলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কারণে তারা ক্রেতা কম পাচ্ছেন। পুরান ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার ও পলাশীর অলিগলিতে মানুষ, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও সাতমসজিদ রোড এলাকাতেও মানুষের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।