শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকাবিরোধী সংঘবদ্ধ প্রচারণার নেপথ্য কাহিনি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইনে গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি নিবন্ধ করোনা ভ্যাকসিনের আইনগত সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়। দীর্ঘ নিবন্ধে বলা হয়, করোনার ভ্যাকসিন তথা টিকা হচ্ছে ‘একটি মেডিকেল জালিয়াতি।’ নিবন্ধে ঘোষণা দেওয়া হয়, এই টিকা করোনার সংক্রমণ রোধ করতে পারে না, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা রোগের সংক্রমণ থামাতেও পারে না। সংক্রমণ ঠেকানোর পরিবর্তে টিকা গ্রহণকারীর জিনগত কোডিং পরিবর্তন করে এবং কোনোভাবেই থামানো যায় না এমন কোনো ভাইরাল প্রোটিন কারখানায় পরিণত করে মানবদেহটিকে। নিবন্ধের দাবিগুলোর আদৌ যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই এবং তা একেবারেই মিথ্যাচার হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইংরেজি নিবন্ধটি স্প্যানিশ এবং পোলিশ ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এরপর কয়েক ডজন ব্লগে তা প্রকাশ করা হয়। মুহূর্তেই তা করোনার টিকায় বিশ্বাস নেই এমন মহল নিজ নিজ নেটওয়ার্কে তা ছড়িয়ে দেয়। ফেসবুকের মালিকানাধীন ক্রাউডট্যাঙ্গেল সূত্রে জানা গেছে, ওই নির্জলা মিথ্যাচারটি ফেসবুকের ৪ লক্ষাধিক ব্যবহারকারীর কাছেও পৌঁছানো হয়েছিল।

এই কান্ডের নেপথ্যে ছিলেন ফ্লোরিডার ক্যাপ কোরালের অস্টিওপ্যাথিক চিকিৎসক ড. যোসেফ মারকোলা (৬৭)। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ফেডারেল প্রশাসনের অনেক চিকিৎসা-ব্যবস্থাকে অহেতুক জনগণের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপতৎপরতায় লিপ্ত। তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফেডারেল প্রশাসনের টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টির সংঘবদ্ধ যে অপচেষ্টা চালানো হয়েছে তার অন্যতম প্রধান কারিগর বলে নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ২৪ জুলাই উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মতৎপরতার ওপর গভীরভাবে নজর রাখেন এমন একজন আইটি বিশেষজ্ঞ নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, করোনা মহামারী শুরুর পর থেকেই ড. মারকোলা টিকার বিরুদ্ধে ফেসবুকে ৬ শতাধিক আর্টিক্যাল পোস্ট করেন। এর ফলে টিকা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক করতে পারে এমন বহু মানুষের কাছে তা পৌঁছায়। ড. মারকোলার এসব মিথ্যা পোস্ট একই সঙ্গে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবেও প্রচার হয়েছে সংঘবদ্ধভাবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনার টিকাবিরোধী অপপ্রচারণার ৬৫% এর জন্যে দায়ী হিসেবে ১২ জনের একটি তালিকা করেছে অলাভজনক সংস্থা ‘সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইট’। তাদেরই একজন হলেন ড. মারকোলা। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র এবং ড. মারকোলার গার্লফ্রেন্ড ‘হেলথ নট নিউজ’র প্রতিষ্ঠাতা এরিন এলিজাবেথ। অনলাইনে ষড়যন্ত্রকারীদের গতিবিধির ওপর গবেষণা করেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অধ্যাপক ড. কোলিনা কলতাই। তিনি বলেছেন, মারকোলা হচ্ছে ভ্যাকসিনবিরোধী আন্দোলনের প্রবক্তা। করোনা মহামারীর কঠিন সময়কে পুঁজি করে ড. মারকোলা মিথ্যাচার আর ভন্ডামির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে চেয়েছেন-যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নিউইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদনে ফক্স নিউজের টাকার কারলসন এবং লোরা ইঙগ্রাহামকেও করোনার টিকাবিরোধী অপপ্রচারণার অন্যতম হোতা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প সমর্থক ফক্স নিউজের অনেক সাংবাদিক-সম্পাদক নিজ নিজ অনুষ্ঠান-পরিবেশনায় আমেরিকানদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে টিকা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। ডেল্টা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ঘটনায় এখন দায়ী করা হচ্ছে ড. মারকোলাকে। কারণ, ডেল্টায় আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে গেছে তাদের ৯৭% এর বেশি টিকা নেয়নি বলে সিডিসি জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর