সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রতারণার জাল দেশে-বিদেশে

ভুয়া ব্রিগেডিয়ার ইশরাত গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বিজ্ঞানী, গবেষক, ডিপ্লোমেটসহ নানা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে ইশরাত রফিক ঈশিতা নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪-এর সদস্যরা। গত শনিবার রাতে রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকা থেকে ইশরাত ও তার সহযোগী শহীদুল ইসলাম দিনারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাবের দাবি, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয়ে ইশরাত প্রতারণা করতেন। নামেমাত্র চিকিৎসক ছাড়া তার সব পরিচয়ই ভুয়া।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, ‘ইশরাত প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা  বাহিনীর র‌্যাংক ব্যাচ ও পদ অর্জনের চেষ্টা চালান। তিনি ফিলিপাইন থেকে পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট (আইপিএই.ফিল.কম) থেকে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে সামরিক বাহিনীর মতো ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদও কিনে নেন।’

গ্রেফতারের সময় ইশরাত ও শহিদুলের কাছ থেকে ভুয়া আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, সিল, সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫ বোতল বিদেশি মদ এবং মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ইশরাত ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, কাউন্টার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন ইত্যাদি সদস্য পদের ভুয়া সনদ বানিয়ে নিজেকে জাহির করতেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ইশরাত করোনা মহামারীকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় সক্রিয় ছিলেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচক ও প্রশিক্ষকের ভূমিকায় নিজেকে উপস্থাপন করেন। অনলাইনে করোনা প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন ও সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রচারণা চালান। ইশরাত ও শহিদুল পরস্পর যোগসাজশে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার ভুয়া সদস্য, কর্ণধার বা দূত হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করেন। তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। র‌্যাব জানায়, ইশরাত ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ২০১৪ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। সেখানকার চাকরি ছেড়ে ২০১৪ সালে একটি সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। দাফতরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চার মাসের মাথায় চাকরিচ্যুত হন ইশরাত। ইশরাতের ভুয়া ডিগ্রিগুলো যথাক্রমে এমপিএইচ, এমডি, ডিও ইত্যাদি। এ ছাড়া ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বিভিন্ন মতামত প্রচার করেন। তিনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চিকিৎসা শাস্ত্রে গবেষণা প্রবন্ধ, আর্টিকেল বা থিসিস পেপার প্রকাশ করেছেন। তিনি মূলত অনলাইনে পাওয়া প্রকাশনা এডিট করে ওইসব নিজে তৈরি করেছেন বলে দাবি করতেন। ইশরাত র‌্যাবকে জানান, তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাফল্যের স্বীকৃতি প্রচার করতেন। ২০২০ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত জিআইএসআর ফাউন্ডেশনের দেওয়া ইন্টারন্যাশনাল ইন্সপিরেশনাল ওমেন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। যা ৩৫ বছর বয়সী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে ‘বছরের সেরা নারী বিজ্ঞানী’র পুরস্কার। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, ভারতের ‘টেস্ট জেম অ্যাওয়ার্ড ২০২০’; থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে অংশ নিয়ে ‘আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড’ ইত্যাদি পেয়েছেন বলে প্রচার করতেন। তিনি ভুয়া নথি উত্থাপন করে ২০১৮ সালে জার্মানিতে ‘লিন্ডা ও নোবেল লরিয়েট মিট-মেডিসিনে’ অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বিভিন্ন সংগঠন যথাক্রমে আমেরিকান সেক্সুয়াল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল সার্ভিকাল ক্যান্সার কোয়ালিশন এবং গ্লোবাল গুডউইল ইত্যাদিতে কাজ করছেন বলে দাবি করেন। ইশরাত ইয়ং ওয়ার্ল্ড লিডার অব হিউমিনিটি নামে একটি অনিবন্ধনকৃত ও অননুমোদিত সংগঠন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত।

অনলাইনে ফেসবুক পেজ ও লিঙ্কইন আইডি রয়েছে তার। তিনি অর্থের বিনিময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনে টকশো, আলোচনা, সাক্ষাৎকার ও সাফল্যসমূহ প্রচার করতেন। যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর