বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকা দুর্নীতির ঘটনায় হুইপপোষ্য রবিউল হোসেন বরখাস্ত

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

টিকা নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্ত হুইপ সামশুল হকের পোষ্য রবিউল হোসেনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রবিউল হোসেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনিশিয়ান।

জানা গেছে, হুইপপোষ্যের টিকা নিয়ে এই অপবাণিজ্য তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা প্রচ- চাপের মুখে পড়েছেন। এদিকে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় চাঞ্চল্যকর এই করোনা টিকাবাণিজ্য নিয়ে দাফতরিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘ঢিমেতাল’ অবস্থায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ ও সচেতন নাগরিক মহলে।

টিকা কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ সরকারি অনুমতি না নিয়ে স্থানান্তরকরণ ও প্রয়োগের নামে লোপাট, মজুদদারি কিংবা বাণিজ্যের অভিযোগে এখনো মামলা না হওয়ায় পটিয়াবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।?

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, করোনার টিকা নিয়ে কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। রাতেই সেই রিপোর্ট স্বাস্থ্যের মহাপরিচালকের কাছে কুরিয়ার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মেইলযোগে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনটি হাতে পাননি এবং মেইলের বিষয়টিও তিনি অবগত নন বলে জানান। শুক্র ও শনিবার পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়নে হুইপ সামশুলের গ্রামের বাড়ি লাগোয়া অস্থায়ী ক্যাম্পে অনুমতিহীন টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা প্রদান উপলক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে হুইপের সম্মতিতে ব্যানার সাঁটানো হয় বিভিন্ন স্থানে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কোনো এমপি সরকার প্রদত্ত করোনার টিকা নিয়ে দলীয় কর্মসূচির আয়োজন না করলেও হুইপপোষ্যরা অমন আয়োজন করায় এলাকায় নানা প্রশ্ন ওঠে। টিকাদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন হুইপ নিজেই। তার ভাই মহব্বত নিজেই টিকা পুশ করেন, এমন ছবিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এভাবে অবৈধ টিকাদানের পেছনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে তোলা হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে খবর প্রকাশিত হলে শুরু হয় তোলপাড়।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ডা. অজয় দাস এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ২ হাজার ৬০০ টিকা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণ করেন রবিউল। এর মধ্যে মাত্র ২১৮টি রেজিস্ট্রেশন কার্ডের বৈধতা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ঘটনার পরপরই এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে সরকারি টিকাদান প্রক্রিয়ায় অনুমতিহীন ও অস্বচ্ছতাসহ নানা ব্যত্যয়ের কথা স্বীকার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ। কিন্তু তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রক্রিয়া এবং রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর তিনি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা এড়িয়ে চলছেন। তবে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বিও ‘দোষীদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না’ মর্মে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শুরু থেকেই মুঠোফোনে সাড়া দিলেও টানা চার দিন অন্তত ১৫ বার ফোন করেও চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান  শাহরিয়ারের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ?করোনা নিয়ে বাণিজ্যের আরও একটি ঘটনা প্রায় ছয় মাস আগে ঘটলেও সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক অভিযোগ পেয়েও নীরব ছিলেন। চট্টগ্রামের সচেতন মহল মনে করেন, তখনকার ওই নীরবতা এখনকার হুইপপোষ্যদের টিকা বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর