বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

শিশুদের ডেঙ্গু ভয়ংকর

এক দিনে আক্রান্ত ২৬৪ জন, শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩১

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গুজ্বরে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৪ জন। শিশুদের আক্রান্ত হার বাড়ায় ডেঙ্গু ঘিরে তৈরি হচ্ছে উৎকণ্ঠা। করোনার চেয়ে শিশুদের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩৮ শিশু। এর মধ্যে আইসিইউতে আছে ছয়জন, এসডিইউতে চারজন। ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে অনেক শিশু আসছে। এ পর্যন্ত চার শিশু  মারা গেছে। আউটডোরেও অনেক রোগী আসছে। জুলাইয়ে রোগীর চাপ বাড়া শুরু হয়, এ মাসেও ঊর্ধ্বমুখী।

এই শিশু বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি বিপজ্জনক। করোনায় শিশুদের মাইল্ড সিম্পটম হয় এবং তাদের ঝুঁকিটা কম থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুতে শিশুরা অনেক ঝুঁকিতে থাকে। শিশুদের শরীরে কামড়াতে মশার সুবিধা হয়। প্রায় বিনা বাধায় শিশুর পাতলা চামড়া ভেদ করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কামড়ায়। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে মশারির পাশাপাশি ক্রিম ও রিপেলেন্ট মাখানো যেতে পারে। তাই জ্বর এলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জ্বর কমানোর কিংবা ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। এর মধ্যে ২৪৮ জন রাজধানীর হাসপাতালে এবং ১৬ জন রাজধানীর বাইরের হাসপাতালে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩ হাজার ৪৪৬ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নয়জন, এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ১৩১ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনজন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩২ জন। বিজিবি হাসপাতাল, পিলখানায় একজন ভর্তি হয়েছেন, চিকিৎসাধীন আছেন সাতজন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আটজন, চিকিৎসাধীন আছেন ১১৩ জন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৮৯ জন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চারজন, ময়মনসিংহ বিভাগে একজন, চট্টগ্রাম বিভাগে তিনজন, খুলনা বিভাগে চারজন, বরিশাল বিভাগে চারজন। বর্তমানে সারা দেশে ৩ হাজার ৪৪৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের বড় অংশজুড়ে রয়েছে শিশু। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন-নবী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার এবার কিছুটা বেশি দেখছি। আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে এলে সঠিক সময়ে সেবা নিশ্চিত করা যায়। দেরি হলে অনেক সময় জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে রোগ ঠেকানো সম্ভব নয়। এজন্য আক্রান্তের হার কমাতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। এজন্য সতর্ক থাকতে হবে।’ সিডিসি থেকে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ করতে জরিপ চালানো হয়েছিল। সে তথ্য সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার মৌসুমে লার্ভার ঘনত্ব নির্ণয়ে জরিপ শুরু হয়েছে। এডিস মশা নির্মূলে নিজের বাসস্থান এবং চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। সিটি করপোরেশনও এডিস মশা নির্মূলে অভিযান পরিচালনা করছে। দিনের বেলায় ঘুমালেও শিশুদের অবশ্যই মশারির মধ্যে রাখতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে শিশুদের ফুল হাতা জামা-কাপড় পরানো যেতে পারে। এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে অভিযানে নেমেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৭ মামলায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। দক্ষিণ সিটিতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর