বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তোলপাড়ের পর ব্যাখ্যা বিশ্বব্যাংকের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেওয়া প্রস্তাবের বিষয়ে তোলপাড়ের পর নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করল বিশ্বব্যাংক। অবস্থান স্পষ্ট করতে গতকাল বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে ছয়টি বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মোকাবিলায় তাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সহায়তা করছে। স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর প্রবাহের প্রভাব কমাতে বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।

ওয়েবসাইটে বিবৃতির অংশের প্রশ্ন-উত্তর                 আকারে প্রকাশিত ব্যাখ্যায়  রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর সড়কসহ মৌলিক অবকাঠামো, সৌরবাতি ও দুর্যোগ প্রস্তুতিতে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ৫৯০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে বিশ্বব্যাংক। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কক্সবাজারের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার কী, সেটাও বুঝতে সহায়তা করছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে যে ৫৯০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে তার পুরোটাই অনুদান। এটি কোনো ঋণ নয়। শরণার্থী নীতিমালার পর্যালোচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলছে, শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের কার্যকারিতা ও প্রভাব বুঝতেই এই পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে এমন ১৪টি দেশের প্রতিটির জন্য এ পর্যালোচনা করা হয়েছে। শরণার্থী নীতি পর্যালোচনা কাঠামো অনুসরণ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) পর্যালোচনাটি করেছে। ইউএনএইচসিআরের বিদ্যমান নীতি, অনুশীলন এবং কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে তথ্য সংগ্রহ করেছে বিশ্বব্যাংক। এটা বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এটা কোনো দেশের জন্য সুনির্দিষ্ঠভাবে করা হয়নি। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন রবিবার জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবের কথা আমরা জানতে পারলাম জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কাছ থেকে। তারা ভাসানচরে যাওয়ার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে একটি শর্ত হলো বিশ্বব্যাংকের এই প্রস্তাব গ্রহণ। সেখানে বলা আছে, রোহিঙ্গাদের সব ধরনের আইনি অধিকার দিতে হবে। বাকি বাংলাদেশিদের মতো অধিকার দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের কাজ করার অধিকার দিতে হবে, তাদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে, তাদের যেখানে খুশি সেখানে চলাচলের স্বাধীনতা দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ইচ্ছামাফিক বসতি গড়ার জন্য জমি কেনার অধিকার অর্থাৎ মালিকানার অধিকার, যা ইচ্ছা ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। তারপর তাদের ভোটাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যাতে তারা ইচ্ছামতো তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। তারা যেন সহজে যে কোনো চাকরি পেতে পারে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। অর্থাৎ চাকরি ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এসব করা হলে বিশ্বব্যাংক তাদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার মতো একটা ফান্ড দেবে। আর এই অধিকারগুলো না দেওয়া হলে সংঘাত হবে বলে বলা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা বাংলাদেশের বক্তব্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, আমরা এসব প্রস্তাব গ্রহণ করছি না।

সর্বশেষ খবর